অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আগামী বাজেটে জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়বে
সোহেল রহমান : দেশে কালো টাকা বলে কিছু নেই বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রোববার দেশের অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট এক ভার্চুয়াল আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন দাবি করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, যা আছে, তা অপ্রদর্শিত অর্থ। এটা ঘোষণা দিয়ে সাদা করার নিয়ম এখনো আছে। অপ্রদর্শিত অর্থ বিশেষতজায়গা-জমি বা এ ধরনের সম্পত্তি ক্রয়ে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে। জমি রেজিস্ট্রেশনে বেশি দামে কিনে কম দাম দেখিয়ে কর ফাাঁকি দেয়ার প্রবণতা রয়েছে। এটা বন্ধ করার জন্য ডিজিটাইলেশন করার কাজ চলছে। এটা পুরোপুরি হয়ে গেলে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে।
অর্থমন্ত্রী জানান, প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থনীতিবিদরা কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো, জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন, প্রণোদনা প্যাকেজ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি যেসব খাত প্রণোদনা সুবিধা পায়নি সেগুলোকে প্যাকেজের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদদের পরামর্শের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায় আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত অত্যন্ত কম। যেসব পণ্যের ওপর যে হারে ট্যাক্স আদায় করা উচিত, আমাদের এখানে সে হারে আদায় হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই ট্যাক্স মওকুফ করা হয়ে থাকে। যেমনÑ সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর জন্য।
অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব খাত সরাসরি জনগণের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত আগামী বাজেটে সেসব খাতের ওপর জোর দেয়া হবে। বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ নজর থাকবে। যাতে জনগণের হাতে টাকা-পয়সা যেতে পারে। কারণ আমরা একটি ব্যতিক্রম সময়ে বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছি। অর্থনীতিবিদরা তাদের আলোচনায় এসব বিষয় তুলে ধরেছেন। তারা জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের ওপর বিশেষ নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী বাজেটে এসব খাতে বরাদ্দ বাড়বে।
অর্থনীতিবিদরা করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রশংসা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তবে এই প্যাকেজ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি যেসব খাত প্রণোদনা সুবিধা পায়নি সেগুলোকেও প্যাকেজের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
আগামী বাজেটের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেট হবে জনকল্যাণমুখী। প্রধানমন্ত্রী সবসময় দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়ে আসছেন। তার নির্দেশে আমরা জনকল্যাণমুখী বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা করছি। গত বছরও করোনা ভাইরাসের মধ্যে বাজেট প্রণয়ন করতে হয়েছে। এ বছরও একই অবস্থা। করোনা ভাইরাস একটা আন্তর্জাতিক সমস্যা। এ সময় শুধু দেশীয় বিবেচনায় কিছু করা সম্ভব নয়। কাজেই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক বিপর্যয়ে দেশীয় শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবটাই করা হবে। পাশাপাশি কর্পোরেট করহার কমানোরও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, পর্যায়ক্রমে কর্পোরেট ট্যাক্স কমিয়ে আনা হচ্ছে। চলতি বাজেটে এটা কমানো হয়েছে, আগামী বাজেটেও বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
সামনে কড়া লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন বার্তা আছে কি নাÑ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে আছেন। আগেও তাদের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছেন। এবারও হয়তো সেভাবে সাহায্য করবেন। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেভাবেই কাজ করবো।
সভায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’ (সিপিডি)-এর চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইন্সস্টিটিউট (পিআরআই)-এর চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার, নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’র সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ প্রমুখ।