আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৫
গ্রামে ফিরতে শহরবাসীর ভরসা মাইক্রোবাস-মোটরসাইকেল
নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে চলমান বিধি-নিষেধের কারণে দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
রোববার গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণায় রাজধানীতে থাকা বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ গ্রামের বাড়ি যেতে গাবতলি বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হয়েছেন। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় উবার-পাঠাও চালিত মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে চড়ে তারা পাটুরিয়া ঘাটে যাচ্ছেন। সেখান থেকে লোকাল বাসে চড়ে ভেঙে ভেঙে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন যাত্রীরা। মাইক্রো ও প্রাইভেট কারে যাত্রী তোলার সময় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের বাধা দিতে দেখা গেছে। তবে পুলিশ সরে অনত্র যাওয়া মাত্রই বাসস্ট্যান্ডে জটলা করে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে চালকদের।
ওয়াহেদ নামের একজন উবার প্রাইভটকার চালক জানান, তার গাড়িতে সামনে একজন ও পেছনে চারজন নিয়ে তিনি পাটুরিয়া ঘাটে নামিয়ে দিচ্ছেন। মাথাপিছু ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া আদায় করছেন। তিনি জানান, যাত্রী পেতে দালালদের সাহায্য নিতে হচ্ছে। এজন্য দালালের ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে।
ভাড়ায় চালিত একটি মাইক্রোবাসের চালক নাজমুল হক জানান, সাত জন করে যাত্রী নিয়ে তিনি সদরঘাটে নামিয়ে দিচ্ছেন। এজন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার করে যাচ্ছেন।
শিবু চন্দ্র রায় নামের একজন বলেন, ঢাকায় একটি ম্যাচে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে থাকেন। সামনে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করার সংবাদে বন্ধুদের নিয়ে রংপুর গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য সকালে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসে অপেক্ষা করছেন। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ভিন্ন পন্থায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, লকডাউনের মধ্যে কিছু করার নাই, তাই বাড়ি যাওয়ার জন্য সকালে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসেছি। বাস না পেয়ে মাইক্রো ভাড়া করে বন্ধুরা মিলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। তবে ভাড়া অনেক বেশি চাচ্ছেন চালকরা।
রাজমিস্ত্রির কাজ করতে য়াকায় এসেছিলেন রাজশাহীর হৃদয়। কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় রাজশাহী যাওয়ার জন্য রোববার ভোরে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে যান। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় সদরঘাট হয়ে রাজশাহী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভাড়া বেশি হওয়ায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করছেন।
গাবতলীতে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ওবায়দুর বলেন, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা এক জায়গায় স্থির থাকতে পারি না। এই সুযোগে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল চালকরা যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন। এরপরও আমরা যাদের ধরতে পারছি, তাদের মামলা-জরিমানা করছি।
মহখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়েও উবার-পাটাও ও গাড়ি ভাড়া নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে দেখা গেছে রাজধানীর অনেক বাসিন্দাকেই।
এদিকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়াঘাটে ঘরমুখী মানুষের চাপ বেড়েছে। রোববার সকাল থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের উপস্থিতি বেশি থাকলেও দুপুর থেকে ঘাটে দক্ষিণবঙ্গগামী মানুষের চাপ বাড়ে। দেখা যায়, পদ্মার শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় যাত্রীরা ফেরিযোগে নদী পারাপার করছেন। ঝুঁকি নিয়ে অনেক যাত্রী ট্রলারে করে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন।
শিমুলিয়াঘাট সূত্র জানায়, ঘাট এলাকায় তিন শতাধিক ব্যক্তিগত ও শতাধিক পণ্যবাহী যানবাহন অবস্থান করছে। এসব যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে নৌরুটে বর্তমানে ১৪টি ফেরি সচল রয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান জানান, সকালের দিকে ১৫টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছিল। তবে দুপুর ১২টার দিকে একটি ফেরি বিকল হয়। বর্তমানে এ রুটে ১৪টি ফেরি চলছে। তিনি আরও বলেন, লকডাউনের আশঙ্কায় যাত্রীরা বাড়ি ফিরছেন। ফলে লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় ফেরিতে যাত্রীদের চাপ রয়েছে।