রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ
মো. আখতারুজ্জামান : ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির ফলে গতবছরের শেষ নয় মাসে আয় কমে যাওয়া। সেইসঙ্গে কমচূতির ফলে অধিকাংশ মানুষ ঋণ করে। সঞ্চয় ভেঙ্গে জীবন নির্বাহ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে দরিদ্ররা নিদারুণ কষ্টে পড়বে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।
ডিসিসিআই আয়োজিত পবিত্র রমজান মাসে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ শীর্ষক ওয়েবিনার রোববার অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ওয়েবিনারে যুক্ত ছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
রিজওয়ান রাহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবের পাশাপাশি অতিরিক্ত মজুদকরণের মাধ্যমে বাজারে পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং, পরিবহনখাতে চাঁদাবাজি এবং অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয় প্রভৃতি কারণে প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসের পূর্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনসাধারণের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, রোজা আসলেই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। অনেক সময় পণ্যের সাপ্লাই ও চাহিদার সমন্বয় থাকে না।
তিনি বলেন, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সচেতন ভাবে কাজ করছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে বিএসটিআইসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান।
রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত পবিত্র রমজান মাসে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ শীর্ষক ওয়েবিনার তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যবসায়ী সমাজকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানান। ব্যবসায়ীদের সজাগ থাকতে বলে মত প্রকাশ করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারীর কারণে দেশবাসীকে বাঁচাতে হবে সরকার আগামী ১ সপ্তাহের জন্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সকলকে তা মানার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এটি একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে জনগণকে আসন্ন রমজান মাসে সুফল দেওয়া যাবে। তিনি জানান, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে ৯ সদস্য বিশিষ্ট বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা শীঘ্রই তাদের কাজ শুরু করবেন। এর ফলে বাজার নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ের রাখা সম্ভব হবে। তিনি লকডাউন সময়ে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে মাঠ পার্যায়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে। মেয়র বলেন, ব্যবসায়ী সমাজের মতামত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে। সকলকে সাথে নিয়ে রমজান মাসে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগরী হাসাপাতালের মাধ্যমে নগরের জনগণকে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে এ সেবা আরও বৃদ্ধি করা হবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আসন্ন রমজানে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা। সেই লক্ষ্যে রমজানে আমদানী নির্ভর ভোগ্য পণ্য বন্দর থেকে কাস্টমস হাউজ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় দ্রুত খালাসকরণ, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও যানজট নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, দেশের সব বাজারে দক্ষ ও পর্যাপ্ত বাজার মনিটরিং’র মাধ্যমে নিয়মিত ন্যায্য মূল্য তালিকা হালনাগাদ করা। সেইসঙ্গে মূল্য তালিকা কার্যকর করা, অতি দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় নগদ অর্থ প্রদান প্রভৃতির প্রস্তাব করেন। মহামারীর সময় সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
মুক্ত আলোচনায় ডিএনসিসি কাঁচা ও সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দীন মোহাম্মদ, কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এসএম নাজির হোসেন, বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, র্যাব-৩ অধিনায়ক রাকিবুল হাসান, বিএসটিআই-এর পরিচালক তাহের জামিল এবং ডিএমপি’র এডিসি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পাইকারী ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. গোলাম মওলা এবং মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েতুল্লাহ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
ডিএনসিসি কাঁচা ও সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য বিধিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যমান নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশ যথাযথ পালন করা হবে। ক্যাবের সহ-সভাপতি নাজের হোসেন বলেন, রমজানে ভোগ্য পণ্যের বাজার অসহনীয় হয়ে পড়ে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সকল সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে বাজার তদারকি বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। ব্যবসায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বিশেষকরে ব্যবসা পরিচালনায় মুনাফাকে সীমিত পর্যায়ের রাখার জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ পাইকারী ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মওলা বলেন, পাইকারী পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণ্যের মজুদের কোন ঘাটতি নেই। শুধুমাত্র ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাড়ায় সেটা স্থানীয় বাজারে বেড়েছে। পাইকারী পর্যায় থেকে খুচরা পর্যায়ে মুনাফা কত হবে তা নির্ধারণে একটি নির্দেশনা প্রদানের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান। এক্ষেত্রে ক্যাশ মেমো ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও তিনি লকডাউন সময়ে পাইকারী বাজারগুলোতে বিশেষকরে রাতের বেলায় নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনাতুল্লাহ জানান, গরম মসলার মজুদের কোন স্বল্পতা নেই। তাই এ ধরনের পণ্যের কোন দাম বৃদ্ধি পাওয়া উচিত নয়। তিনি নিত্যপণ্যের পাইকারী বাজার সীমিত পর্যায়ে খোলা রাখার আহ্বান জানান।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। তিনি অবহিত করেন, সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশে কোন পণ্যের মজুদের স্বল্পতা নেই। রমজানে তাদের সবগুলো টিম সপ্তাহে ৭ দিন কাজ করবে। এছাড়াও মাংসের দাম নির্ধারণের একটি নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএসটিআই’র পরিচালক তাহের জামিল বলেন, বর্তমানে ২২৭টি পণ্যে বিএসটিআই’র মান নিয়ন্ত্রণ সনদ প্রদান করেছে। মানুষের মানসম্মত পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে বিএসটিআই পক্ষ হতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করেছে। পণ্য পরীক্ষার জন্য লাইবেরটরি গুলো সীমিত আকারে খোলা রয়েছে। সার্ভিলেন্স কার্যক্রম বৃদ্ধি ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদ বলেন, ঢাকা শহরের ভিতরে সুপারশপের ২০০টি কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না। সুপারশপে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হচ্ছে।