বইমেলার প্রভাব পড়েনি বাংলাবাজারে
অর্থনীতি ডেস্ক : ক্রেতা সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা বাংলাবাজারে বেচাবিক্রি আরও কমে গেছে করোনাভাইরাসের ধাক্কায়। বছরজুড়ে আশায় থাকা বইমেলাও এবার পালে হাওয়া দিতে পারেনি; ফলে হাতগুটিয়েই বসে আছেন প্রকাশক ও বিক্রেতারা।
দেশের বৃহত্তম এই বই বাজারের প্রকাশক ও বিক্রেতারা বলছেন, এক বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সহায়ক গ্রন্থের বিক্রি প্রায় বন্ধ। একই দশা চাকরি বিষয়ক বইয়ের প্রকাশনারও।
সীমিত পরিসরে বইমেলার আয়োজন হওয়ায় নতুন বই প্রকাশের তোড়জোড়ও ছিল কম। মেলা ঘিরে তবুও যতটুকু চাঞ্চল্য ছিল, লকডাউনের কারণে সেটিও উধাও। তাছাড়া অনলাইনকেন্দ্রিক কেনাবেচার প্রভাবও পড়ছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়।
মহামারীর প্রভাবে আর্থিক সংকটের এমন প্রেক্ষাপটে প্রকাশনা খাতের ব্যাপক এই ছন্দপতন কাটিয়ে বাংলাবাজারকে টেনে তুলতে সরকারের কাছে প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বাংলাবাজারের অধিকাংশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও বইয়ের দোকানে গিয়ে শোনা গেল, আর্থিক সঙ্কট তৈরি হওয়ায় তাদের হাহাকার ও হতাশার কথা। বেচাকেনা ও প্রকাশনার কাজ না থাকায় অভ্যাসবশত দোকান বা প্রতিষ্ঠান খুললেই সময় কাটছে ঝিমিয়ে।
বাংলাবাজারের ইসলামিয়া বুক ডিপোর বিক্রেতা শামসুল হক বলেন, “কোনো বেচাবিক্রি নাই। প্রতিদিনই লসে পড়ছি। মরি মরি করেও মরছি না, আবার বাঁচি বাঁচিও করেও বাঁচছি না। এরকম একটা ধন্দে আছি আমরা।”
মহামারীতে প্রকাশকদের করুণ অবস্থা তুলে ধরে পুঁথিঘরের প্রকাশক জহরলাল সাহা বলেন, ‘দিনে যদি মিনিমাম ৫ হাজার টাকার সেল না হয়, তাহলে একজন কী করে ব্যবসা করবে, ঘর ভাড়া দেবে, সংসার চালাবে?’
‘স্কুল-কলেজ যদি খোলা থাকত, হয়ত কিছুটা সেল হত। নন-টেক্সট বইও যদি কিছু বিক্রি হত। বিভিন্ন পাঠাগারে বই দেই, এখন তো সব স্থবির হয়ে গেছে।’ দেশের বৃহত্তম এই বই বাজারের মান্নান মার্কেটে রয়েছে সাড়ে তিনশ দোকান। মার্কেটের মালিক মতিয়ুর রহমান আকরাম জানান, ১৪ মাস ধরে বিক্রি নেই বললেই চলে।
মহামারী কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমাদের বিক্রিটা বাড়বে, কয়েক লক্ষ লোকের জীবিকা বাঁচবে।’ ক্ষতি সামলাতে প্রকাশনাকে শিল্প ঘোষণার দাবি জানিয়ে নওরোজ কিতাবিস্তানের প্রকাশক মনজুর খান চৌধুরী বলেন, এতে কিছুটা সুবিধা হত। ‘শিল্প ঘোষণা হলে অনেক ধরণের সুবিধা পাব। আমাদের সঙ্গে বাইন্ডিং জড়িত, প্রেস জড়িত; সব মিলিয়েই কিন্তু এটা একটা শিল্প। বইয়ের সমস্ত রসদ এখান থেকেই যায়।’
আল হামরা প্রকাশনীর প্রকাশক খান মোহাম্মদ মুরসালীন বলেন, ‘পুরো প্রকাশনা জগতটাই একবছর ধরে বন্ধ। বিভিন্ন জায়গায় প্রণোদনা গেল, সবাই কম বেশি পাচ্ছেন; কিন্তু জ্ঞান চর্চার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কিছুই পেল না।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারীর ধাক্কায় হঠাৎ বড় ক্ষতির মুখে পড়লেও এই শতাব্দির শুরুর দিকেই সঙ্কট বাড়তে থাকে দেশের প্রকাশনার সবচেয়ে বড় এই বাজারে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন খুচরা বিক্রেতারা।
দেশ ভাগের কিছু আগে কলকাতা থেকে বই এনে বিক্রি চললেও পঞ্চাশের দশকে বাংলাবাজারে প্রকাশনা শুরু হয়। শুরুর দিকে কলকাতা থেকে আসা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জমিয়ে তোলে বইয়ের এই বাজার।
আগের মতো সরগরম না থাকায় বই ছাপানো, বাঁধাই করা, বিক্রিসহ প্রকাশনার নানা কাজে জড়িতরা সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন। প্রকাশক ও বিক্রেতারা বলছেন, জ্ঞান চর্চার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কেন্দ্রবিন্দু থেকে সরে যাওয়া এবং বাংলাবাজারে লোকসমাগম কমে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে বিক্রিতে।