দ্বিতীয় দিনে র্যাবের জরিমানা সাড়ে ৬ হাজার টাকা কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে যান চলাচল বেড়েছে
সুজন কৈরী : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবারও রাজধানীজুড়ে কঠোর অবস্থানে ছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হলেই গুনতে হচ্ছে জরিমানা। তবে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মানুষজনের চলাচল আগের দিনের তুলনায় বেশি ছিলো। মুভমেন্ট পাস ছাড়াই নানা অজুহাতে অনেককে সড়কে বের হতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর সড়কগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে তৎপর থাকতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। বাসা থেকে বেরিয়ে সড়কে নামলেই মুখোমুখি হতে হচ্ছে জিজ্ঞাসাবাদের। তবে বিধিনিষেধের প্রথম দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার সড়কে যানবাহনের সংখ্যা ছিলো বেশি। কিন্তু চেকপোস্টে প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ফলে কিছু কিছু চেকপোস্টের পেছনে ব্যক্তিগত গাড়ির দীর্ঘ জটলাও দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। রিকশা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার সব কিছুই থামিয়ে থামিয়ে জিজ্ঞেস করছেন, কে কোথায় যাবেন। যথাযথ কারণ বলতে পারলে গন্তব্যে যেতে দিচ্ছেন। আর না বলতে পারলে পথ থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। দেখতে চাইছেন ‘মুভমেন্ট পাস’। তবে এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনে বের হওয়া সাংবাদিকদেরও মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে।
সকালে গাবতলীর আমিন বাজারে রাজধানীতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার উভয় পয়েন্টে গাড়ির দীর্ঘ সারি চোখে পড়েছে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের বাইরে বের হওয়ার কারণ কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করতে দেখা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিছক ঘুরতে কিংবা শখের বশেও মানুষকে ঘরের বাইরে বের হতে দেখা গেছে। অনিয়মের বিষয়টি বেশি লক্ষ্য করা গেছে পাড়া-মহল্লায়। সেখানে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঘরের বাইরে বের হলেও বিষয়টি তদারকি করতে দেখা যায়নি তেমন কাউকেই।
এদিকে যাত্রী ছাড়া রিকশা দেখলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে রিকশা উল্টিয়ে দিচ্ছে, আবার রেকারে দিচ্ছে। পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদের কাছে মুভমেন্ট পাশ আছে কি দেখতে চাইছে। দেখাতে পারলে ছেড়ে দিচ্ছে নইলে রির্টান করছে বাসা বা জরিমানা করতে দেখা গেছে। প্রধান সড়কে কোনো রিকশা যাত্রী নিয়ে এলে, যাত্রী নামিয়ে রিকশা ঘুরিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া যদি কেউ কোনো কারণ ছাড়া সড়কে মোটরসাইকেল, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ বের করলে কাগজপত্র দিতে না পারলে মামলা দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
রিকশ চালক আনোয়ার জানান, ভোর থেকেই রাস্তায় রিকশা চালাচ্ছি। সকালের দিকে পুলিশ কিছু রিকশায় রেকার দিয়েছে, আবার কিছু রিকশা উল্টিয়ে রেখেছে। আমার রিকশাও উল্টিয়ে রেখেছিলো। দুই-তিন ঘণ্টা পরে ছেড়ে দিয়েছে। আমরা গরিব মানুষ ভাই একদিন রিকশা না চালালে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। রোজা রাখছি তাই ১টা পর্যন্ত রিকশা চালাবো। পড়ে বাসায় চলে যাবো। আবার কালকে ভোরে বের হবো। লকডাউনে কারও কিছু হয় না যতো সমস্যা শুরু আমাদের মতো গরিব মানুষের।
লকডাউনের মধ্যেও ব্যাংকসহ জরুরি যেসব অফিস খোলা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা রাস্তায় নেমে অফিসে পৌঁছাতে গিয়ে পড়েছেন বিপাকে। কর্মীদের অফিসে নিয়ে যেতে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে সরকারিভাবে নির্দেশনা দেয়া হলেও বাস্তবে দেখা গেছে অফিসে পৌঁছানোর উপায় কর্মীদেরই করতে হয়েছে। দেখা গেছে, দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে তারা কোনো পরিবহন পাচ্ছেন না। রিকশা চললেও তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া রিকশাওয়ালারা ভাড়াও হাঁকছেন অনেক বেশি।
রাস্তায় গাড়ির চাপ না থাকায় বেশির ভাগ সড়ক ফাঁকা থাকলেও পুলিশের চেক পোস্টের কারণে কোনো কোনো সড়কে যানজটেরও সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেসব সড়ক ব্যবহার করতে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি অনেকে।
গাবতলি চেকপোস্টে থাকা পুলিশের এসআই ইকবাল মাহমুদ বলেন, বুধবারের চেয়ে বৃহস্পতিবার গাড়ির চাপ বেড়েছে। মুভমেন্ট পাস নিয়ে অনেকেই জরুরি কাজের চাইতে ব্যক্তিগত কাজে বেশি বের হতে দেখা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে মামলা ও সচেতন করা হচ্ছে।
ফার্মগেট চেকপোস্টে দায়িত্বরত এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাস নিয়ে বের হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। রাস্তায় যারা বের হয়েছেন বেশির ভাগেরই পাস রয়েছে।
শাহবাগ এলাকায় চেকপোস্টে দায়িত্বরত এসআই আশিষ রায় বলেন, মুভমেন্ট পাস ছাড়া আমরা কাউকে যেতে দিচ্ছি না। তবে জরুরি চিকিৎসা সেবা কাজে নিয়োজিতদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার গাড়ির চাপ বেড়েছে।
মো. হিমেল নামের ঢাকা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষাথী বলেন, আমি থাকি শেওড়াপাড়ায়। হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে। বাসা থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলেন, আমি টিউশনি পড়াতে যাচ্ছি মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরে। শেওড়াপাড়া থেকে হেঁটে এসেছি। লকডাউনে সপ্তাহে দুদিন পড়াতে হবে, নাহলে আমার টিউশনিটা চলে যাবে, এজন্যই বের হওয়া।
নাঈমুর রহমান ও শহীদুজ্জামান মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। তারা বলেন, একজন যাবেন বিদ্যুৎ বিল দিতে। অন্যজন মোটরসাইকেল মেরামত করতে বের হয়েছেন। কাজেই বের হয়েছি, তারপরও আমাদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু পুলিশ কোনো কথাই শুনবে না। শুধু বলছে, লকডাউনে কেন বের হলেন। এ কাজ তো আপনারা পরেও করতে পারতেন।
কাফরুল থানার এসআই সোহেল রানা বলেন, কিছু মানুষ প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। যথাযথ কারণে ঘর থেকে বের হলে আমরা তাদের যাতায়াত করতে দিচ্ছি।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর প্রগতি সরণির কোকাকোলা এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশির কারণে দীর্ঘ যানজটের দেখা দেয়। এ যানজট কুড়িল বিশ্বরোড ছাড়িয়ে যায়। গাড়ির দীর্ঘ সারিতে অধিকাংশই ব্যক্তিগত গাড়ি, কিছু স্টাফ বাস এবং মালবাহী লরি দেখা গেছে। এছাড়াও কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সও আটকে থাকতে দেখা গেছে।