টাঙ্গাইলের ধলেশ্বরী এখন কৃষকের শষ্য ভা-ার
আরমান কবীর : টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধলেশ্বরী নদী এখন সবুজ ফসলের ভান্ডারে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ এই নদী দেখে বুঝতেই পারবে না এটা নদী। বন্যার সময় তলিয়ে যাওয়া ধলেশ্বরী নদীর বুকে আবাদ করা হয়েছে ইরি-২৮ ও ২৯, বোরো ধান, কাসকলাই,বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। এক সময়ের খর¯্রােতা ধলেশ্বরী এখন সবুজ ফসলের সমারোহ। গত এক দশক আগে থেকে এ নদীর বেশিরভাগ অংশে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে থাকে স্থানীয় কৃষক।
এ নদীর বুকে বন্যার মৌসুম ছাড়া বাকি সময় বিভিন্ন ফসল চাষ হয়ে থাকে। সদর উপজেলার হুগড়া,কাকুয়া, কাতুলী, বাঘিল, পোড়াবাড়ি, ছিলিমপুর ইউপিনয়নের প্রায় ২০ থেতে ২৫ কিলোমিটার নদীতে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধলেশ্বরী নদীর সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়নের গোলচত্তর এলাকা, সেলিমপুর ইউনিয়নের ঝিনাই পাড়া, চর পাকুল্লা, কাকুয়া তোরাপগঞ্জসহ বিভিন্ন অংশে সবুজ আর সবুজ। নদীটির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে কৃষকের চাষীভূমিতে পরিণত হয়েছে। নদীর উপরের সেতু ছাড়া বোঝার কোন উপায় নেই এটা কি নদী না ফসলী মাঠ।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র জানান, টাঙ্গাইলের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যমুনা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর সৃষ্টি হয়েছে। নদীটির দুটি শাখা রয়েছে। একটি শাখা পাশ্ববর্তী জেলা মাকিগঞ্জের উত্তর দিয়ে প্রবাতিহ হয়ে মানিকগঞ্জের দক্ষিণে গিয়ে শেষ হয়েছে। অপরটি কালীগঙ্গার সাথে মিলিত হয়েছে। বুড়িগঙ্গা এক সময় ধলেশ্বরীর শাখা ছিল। এর প্রবাহ পূণরায় ধলেশ্বরীতেই পতিত হয়।
কাকুয়া ইউনিয়নের কৃষক বারেক সিকদার বলেন, এ নদী দিয়ে নৌকা, স্টিমার ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলতো। এখন আর আগের মতো পানি থাকে না। বন্যার সময় তিন থেকে চার মাস নদীতে পানি থাকে। বছরের বাকি সময়টা শুকনো থাকে। প্রতি বছর বন্যার সময় পলি মাটি এসে পড়ায় ফলন আল্লাহর রহমতে ভাল হয় ।
চর পাকুল্লা গ্রামের রাজা মিয়া (৫২) বলেন, অনেক বছর আগে ওই সময়ে নদী অনেক গভীর ছিল। চৈত্র মাসেও নদী দিয়ে নৌকা চালানো যাইতো। এখন নদী মরে গেছে। অন্য অঞ্চলের মানুষ এখানে আসলে বুঝতেই পারবে না এটা নদী
মাহমুদনগ গ্রামের শহীদ মিয়া বলেন, এখন নদী দেখে খালও মনে হয় না। কারণ নদীর পাড় নাই, গভীরতা নাই, নদীতে বালু নাই। যে কারণে আমরা ধানসহ সবজি চাষ করে থাকি। এ বছরও আমি এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি।
সেলিমপুর ইউনিয়নের সদস্য মো. আমিন মিযা বলেন, ‘ধলেশ্বরী নদী বর্তমানে ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। বালু পরিবর্তে উর্বর মাটিতে ভরে গেছে পুরো নদী। এ নদীতে ধানসহ যেকোন ফসল চাষ করলে ফলনও ভাল হয়।’
কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ওমরপুর, দেলদা, রাঙ্গাচিড়া ও চরপৌলি গ্রামের পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী নদী বয়ে গেছে। আমার ইউনিয়নের ৫ কিলোমিটার নদীতে ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে।
বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের লোহাজানি, শিবপুর গ্রামের পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী নদীর সীমানা প্রায় ৫ কিলোমিটার। প্রত্যেক জায়গাতে ধানসহ ফসল চাষ করা হচ্ছে।
সিলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেক আলী বলেন, ‘পাকুল্লা, তেজপুর, সুবর্ণতলী গ্রামে পাশ দিয়ে ৪ কিলোমিটার নদী বয়ে গেছে। আগে নদীতে বালু আর বালু থাকতো। এখন উর্ভর মাটি হওয়ায় ফসল চাষাবাদ করা হয়।
এ ব্যাপারে (টাঙ্গাইল-৫) সংসদ সদস্য আলহাজ মো.ছানোয়ার হোসেন জানান, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রালয়ে কথা হয়েছে। অচিরেই নদীর কাজ শুরু হবে। ধলেরশ^রী, লৌহজং, ঝিনাই নদীসহ কয়েকটি নদীকে এ বি সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। ধলেশ^রীকে এ ক্যাটাগরিতে আনা হয়েছে।