প্রথম পাতা • বিনোদন • লিড ৫
বাংলা সিনেমার রাজকুমার ওয়াসিম চিরনিদ্রায় শায়িত
নিজস্ব প্রতিবেদক : গুলশানের আজাদ মসজিদে রোববার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় প্রয়াত চিত্রনায়ক ওয়াসিমের। এরপর তাকে নেওয়া হয় বনানীতে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।
১৭ এপ্রিল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মৃত্যু হয় ওয়াসিমের। রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় এ চিত্রনায়ক।
ওয়াসিম কিছুদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। অবস্থা এমন দাঁড়ায় তিনি হাঁটতেও পারছিলেন না। বিছানায় শুয়েই দিন কাটছিল তার। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
১৯৭২ সালে চিত্রনায়ক ওয়াসিমের ক্যারিয়ার শুরু সহকারী পরিচালক হিসেবে। সিনেমার নাম ‘ছন্দ হারিয়ে যায়’। এটির পরিচালক এসএম শফী। নির্মাতা অনেকটা জোড় করে তাকে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করতে বলেন। রাজিও হয়ে যান তিনি। তার নাম তখন মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ।
‘ছন্দ হারিয়ে যায়’ সিনেমার সেই ছোট চরিত্রটিই ভাগ্য ঘুরিয়ে দেয় ওয়াসিমের। পরিচালকের খুব পছন্দ হয় তার অভিনয়। শফীর পরবর্তী সিনেমা ছিল ‘রাতের পর দিন’। সেখানে নায়কের প্রস্তাব পান তিনি। এরপরই তার নাম পাল্টে মেজবাহ থেকে হয়ে গেল ওয়াসিম। ‘রাতের পর দিন’ সিনেমায় ওয়াসিমের বিপরীতে ছিলেন সেই সময়ের হার্টথ্রব নায়িকা ববিতা। রাজ্জাক ও ফারুকদের সঙ্গে দর্শক মাতাতে থাকেন এ অভিনেতা। যা দ্রুতই তাকে সুপারস্টারের খ্যাতি এনে দেয়।
প্রথম সিনেমার ব্যাপক সফলতার পর আর থেমে থাকতে হয়নি ওয়াসিমকে। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় তার ৩ টি সিনেমা। এর মধ্যে রয়েছে ‘ডাকু মনসুর’, ‘কে আসল কে নকল’ ও জিঘাংসা’। যেগুলোতে তার বিপরীতে ছিলেন নায়িকা শাবানা, সুচরিতা ও কবিতা।
ওয়াসিমের ক্যারিয়ার বেশ ভালো গতিতে চলছিল। এরমধ্যে এসএম শফী তার সফলতাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দেন। তার নির্মিত ‘দ্য রেইন’ সিনেমায় অভিনয় করেন ওয়াসিম। যেখানে তার বিপরীতে ছিলেন অলিভিয়া।
‘দ্য রেইন’ মুক্তির পর ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। ৪৬টি দেশে প্রদর্শিত হয়েছিল সিনেমাটি। বলা হয়, ওয়াসিমের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় সফলতা এটি। এরপর থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে তার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।
সত্তর দশকের রোমান্টিক হিরো হিসেবে বেশ জনপ্রিয় রাজ্জাক ও ফারুক। সেই সময় ফোক ফ্যান্টাসি ও অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা দিয়ে মাতাচ্ছিলেন ওয়াসিম। তার বেশিরভাগ সিনেমা বেশ ব্যবসা সফল হয়েছে। ফ্যান্টাসি বাংলা সিনেমার রাজকুমার বলা হতো ওয়াসিমকে। তিনি ছিলেন ঘোড়া চালানোয় পারদর্শী। তাই তার সিনেমায় বেশিরভাগ সময় থাকতো ঘোড়ায় চড়ার দৃশ্য।
তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ওয়াসিমের সিনেমার পথচলা থেমে যায় একুশ শতকের শুরুতেই। তার স্ত্রী হঠাৎ মারা যান ২০০০ সালে। এর কয়েক বছর পর তার মেয়ে বুশরা আহমেদ ১৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। এর পর থেকে নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নেন তিনি।
ওয়াসিমের একমাত্র ছেলে দেওয়ান ফারদিন থাকেন যুক্তরাজ্যে। সন্তানের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আরও একা হয়ে যান এ নায়ক। অনেকদিন পর যখন গণমাধ্যমে খবরে তাকে পাওয়া গেল, তখন তিনি বেশ অসুস্থ। অসুস্থতার এক পর্যায়ে ওয়াসিমকে নেওয়া হাসপাতালে। কিন্তু ফেরা হলো না সেখান থেকে। অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন বাংলা সিনেমার এ রাজকুমার।
এক সময় বাণিজ্যিক সিনেমায় অপরিহার্য নায়ক হয়ে ওঠেন তিনি। ওয়াসিম অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’, ‘রাতের পর দিন’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘দি রেইন’, ‘রাজদুলারী’, ‘বাহাদুর, ‘মানসী’, ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘বেদ্বীন’, ‘ঈমান’, ‘লাল মেম সাহেব’ ইত্যাদি। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও