শ্রমিকদের না মেরে ‘ক্রাউড কন্ট্রোলিং’ ব্যবস্থা কি রাখা যেত না
রাদ আহমদ
এই প্রশ্নটাই জাগে। আগে থেকে ‘ক্রাউড কন্ট্রোলিং’-এর ব্যবস্থা কি রাখা যায় না? বিশেষ করে একটা ফ্যাক্টরিতে অথবা নির্মাণ স্থাপনায়- যেখানে স্বাভাবিকভাবেই অনেক মানুষের সমাগম হয়।
এইসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক (প্রাইভেট) সিকিউরিটি সংস্থাগুলার কাছে সুলিখিত, গবেষণা লব্ধ হিসাব-নিকাশ অলরেডি থাকে। এতো মানুষের সমাগমের জন্য এতো জন গার্ড (ক্রাউড কন্ট্রোলার)- এই এই সেইফটি ইন্সট্রুমেন্ট- এই এই পরিমাণে রাখতে হবে। অনেকটা ফায়ার ফাইটিঙের নিয়মকানুনের মতো, বেশ কিছু সাধারণ নির্ধারিত-রুলস আছে।
দরকার হলে পুরা সিকিউরিটি বাহিনীর নিয়মিত ড্রিল করা- এইসব করা লাগে।
বিলিয়ন ডলার খরচ করা একটা নির্মাণ স্থাপনায় এই ন্যূনতম সিকিউরিটি/ ক্রাউড কন্ট্রোলিং ব্যবস্থাপনা থাকবে না- এটা কীভাবে মানা যায়?
পুলিশের বা অন্য অনেকের ভাষ্য হচ্ছে যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছিল সেই কারণে এই এই অবস্থা।
ক্রাউড কন্ট্রোল করার যে ইকুইপমেন্টগুলো আছে পৃথিবীতে যেমন- টিয়ার গ্যাস, জল-কামান। এগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে না, এবং এদেরকে দূর থেকে পরিবহন করে আনার মতো সময়/ পরিস্থিতি হাতে থাকে না।
এতোদিনেও কেন এসব পরিমাণে পর্যাপ্ত করা হচ্ছে না- সেই বিষয়ে অনুসন্ধান করা দরকার।
এতো বড়ো ফ্যাক্টরি বা নির্মাণ-স্থাপনার খুব কাছাকাছি এলাকায় এই ধরনের ইকুইপমেন্ট আলাদাভাবে এনে আগে থেকে সংরক্ষণ করা যেতো।
দেশের অনেক বড় বড় কাজের চেয়ে এই ধরনের বিষয়গুলা নিশ্চিত করার প্রায়োরিটি অনেক বেশি।
যে ব্যবস্থাগুলা আগে থেকে করা হয় নাই- এটাই মালিক পক্ষের, এবং আইন রক্ষাকারী পক্ষের বার্থতা।
শ্রমিকের তথা জনগণের জানের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি একটা রাষ্ট্রের। অনেক বড় বড় কাজে হাত দেবার আগে- এটা নিশ্চিত করা জরুরী যে শ্রমিকেরা বা জনমানুষের কেউ যেন, এরকম যেকোনও ইমার্জেন্সি পরিস্থিতিতে, অন্তত – পুলিশের গুলিতে যেন প্রাণ না দেয়। এটা খুবই দুঃখজনক।
পরিস্থিতি অনেকসময় সত্যিকারভাবে হাতের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। উত্তরবঙ্গে কয়েকমাস আগে দেখা গিয়েছিল পুলিশকে অবরুদ্ধ ঘর থেকে, মারমুখী মানুষের হাত থেকে কোনওমতে জান বাঁচিয়ে পালিয়ে ফেরত আসতে হয়। নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য গুলি করতে হয়।
সেইসব ক্ষেত্রে- এ রকমভাবে কোণঠাসা না হয়ে পরিস্থিতি ট্যাকেল দেয়ার ট্রেনিং উনাদের থাকার কথা। সেসব কাজ করে নাই কেন। কোণঠাসা হয়ে একটা কর্নারে পুলিশের অস্ত্র হাতে আটকে যাবে কেন?
এই পরিস্থিতির দায় মালিকপক্ষের পক্ষে এড়ানো কোনোভাবেই সম্ভব না। মনে হয় বাইরের দেশে এইসব ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে কোর্ট থেকে ক্ষতিপূরণের এত উচ্চমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয় যে, ফ্যাক্টরি মালিকদের নড়েচড়ে বসতে হয়। উনারা ভবিষ্যতের বড়ো ক্ষতির ভয়ে এই সিকিউরিটির জন্য যা যা করা দরকার – সেইগুলি আগে থেকেই করতে থাকেন।
উদাহরণস্বরূপ, অল্প কয়েক লক্ষ টাকা করে মৃত শ্রমিকদের হাতে ধরিয়ে দিলে চলবে না। কয়েক কোটি করে টাকা একেক মৃত পরিবারের হাতে তুলে দিতে হবে। ¯্রফে মালিকপক্ষকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এ রকম রায় দেয়া হয়। মালিক পক্ষের হিসাব নিকাশের খাতায় টান পড়লে কেবল তখন থেকেই তারা সচেতন হবে।
লেখক : কবি ও ফ্রিল্যান্স প্রোগ্রামার। সূত্র : ফেসবুক