বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে : শাকিল রিজভী কঠোর বিধিনিষেধেও চাঙ্গা শেয়ারবাজার
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার সোমবার সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসেও সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এই নিয়ে তিন কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে সূচক ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কঠোর বিধিনিষেধের আগে বড় দরপতন হলেও কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে দেশের শেয়ারবাজার চাঙ্গা ভাব অব্যাহত রয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে প্রতিটি কার্যদিবসে মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের গতি।
এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী এ প্রতিবেককে বলেন, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বিএসইসি শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু রাখার সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন বিশ্বাস করছেন, যেকোনও পরিস্থিতিতে ব্যাংক খোলা থাকলে শেয়ারবাজারে লেনদেনও চলবে।
তিনি আরও বলেন, সামনে কঠোর বিধিনিষেধ বাড়লেও শেয়ারবাজারে এফেক্ট পরবে না। এখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে সামনে বাজার আরও ভালো হবে।
বিনিয়োগকারী এহতেশামুজ্জামান বলেন, বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেছেন যেকোনও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় ব্যাংক খোলা থাকলে শেয়ারবাজারে লেনদেন চালু থাকবে। এটা বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে।
এ নিয়ে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ঈদকে সামনে রেখে শেয়ারবাজার আরও ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ৮ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়। আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ বহাল থাকার কথা ছিল। চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ একই শর্তে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ছে। গতকাল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ তথ্য জানান।
প্রথমে কঠোর বিধিনিষেধ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে ব্যাংক বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও প্রায় একইসময়ে ব্যাংক বন্ধের নির্দেশনা দেয়। যার প্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারের লেনদেনও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিশেষ প্রয়োজনে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্যাংক লেনদেনের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংক খোলার সিদ্ধান্ত আসার পর শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কঠোর লকডাউনের মধ্যে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শেয়ারবাজারে আড়াই ঘণ্টা লেনদেন চলছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে প্রথম লেনদেন হয়। ঐ দিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়। ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ৫১ পয়েন্ট। আর সিএসইর সার্বিক মূল্য সূচক বাড়ে ১৮৭ পয়েন্ট।
আর দ্বিতীয় কার্যদিবস রোববার ডিএসই প্রধান সূচক বাড়ে ২১ পয়েন্ট এবং সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক বাড়ে ৩৪ পয়েন্ট। সোমবার স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মধ্য দিয়ে। এতে প্রথম দুই মিনিটের লেনদেনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রধান মূল্যসূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
তবে এরপর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়। এতে ঋণাত্মক হয়ে পড়ে সূচক। ১০টা ১৫ মিনিটে ডিএসইর প্রধান সূচক ৬ পয়েন্ট পড়ে যায়। অবশ্য এরপর আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে সূচক। প্রথম ২০ মিনিটের লেনদেনে সূচকটি বাড়ে ৬ পয়েন্ট।
প্রথম ২০ মিনিটের লেনদেনে সূচকে অস্থিরতা দেখা দিলেও সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত সূচক টানা ঊর্ধ্বমুখী থেকেছে।
ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩৪৯ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে কঠোর বিধিনিষেধের তিন কার্যদিবসে ডিএসই প্রধান সূচক বাড়ল ৯০ পয়েন্ট।
প্রধান সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে ডিএসইর অপর দুই সূচক। এর মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২১৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মূল্য সূচকের উত্থানের সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৯৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬০২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৯৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
এদিকে লেনদেন বাড়ার দিনে টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১০৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিডি ফাইন্যান্সের লেনদেন হয়েছে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, লাফার্জহোলসিম বাাংলাদেশ, রবি, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, নিটল ইন্স্যুরেন্স এবং সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৫৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৮টির এবং ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।