আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ১
অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথে ঝুঁকি বাড়িয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ
বিশ্বজিৎ দত্ত : করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ২০১৮-১৯ সালে দেশের জিডিপি হার ছিল ৮.১৫ শতাংশ। ২০২০ সালে করোনার প্রথম দফা আক্রমনে জিডিপির হার প্রায় ৩ শতাংশ কমে হয় ৫.২৪ শতাংশ। টাকার অংকে এটি ছিল প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে দেশে সংক্রমন কমতে থাকে। দেশের আভ্যন্তরীণ বাজার ও বৈদেশিক বাণিজ্য অল্পঅল্প করে কিছুটা এগুতে থাকে। সরকার এই সময় জিডিপিতে প্রণোদনা প্যাকেজ দেয় ১ লাখ ২১ হাজার৩৫৩ কোটি টাকা। প্রণোদনা সম্পর্কে অর্থসচিব জানিয়েছিল, এই প্যাকেজ অর্থনীতিকে পুনর্গঠন ও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে। তাই ২০২১-২২ সালের প্রবৃদ্ধি হবে ৮.২ শতাংশ।
এ বিষয়ে সম্প্রতি সংশয় প্রকাশ করেছে গবেষণা সংস্থা সিপিডি। তাদের মতে অর্থনীতি কোন অবস্থায় আগামীতে যাবে তা নির্ভর করবে আসলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ওপর। এই সময়ে সরকার কত ভালভাবে দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ শ্রম শক্তি ও শিল্প ব্যবস্থাপনার মধ্যে কত ভালভাবে সমন্বয় সাধন করতে পারছে। তাদের হিসাবে দেশে এখন প্রায় ১ কোটি ৬৮ লাখ নতুন দরিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। দরিদ্রের হার ২০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩ শতাংশ হয়েছে। শ্রম শক্তির ৩ শতাংশ তাদের কাজ হারিয়েছে। দেশে মোট শ্রমশক্তি সাড়ে ৬ কোটি।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায়, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে আবারও সংকুচিত হচ্ছে। পরিবহন খাতেও লকডাউনের ফলে স্থবীর হয়ে রয়েছে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। রপ্তানি আয় কমে গেছে। ঋণ ও জিডিপির হার ৪০ শতাংশ হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ধাক্কায় দেশে প্রায় ৬৩০টি শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এরমধ্যে ১৩০টি কারখানা বিজিএমএইর তালিকাভ’ক্ত। ৭২টি নীটওয়্যার বন্ধ হয়েছে, ২৩ টি টেক্সটাইল মিলও বন্ধ রয়েছে। কোভিডের কারণে এদের বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের ৬টি এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে মোট কারখানার সংখ্যা ৭৯৮২টি এরমধ্যে ৪৮০০ টি কারখানা গার্মেন্ট সংশ্লিষ্ট।
এ বিষয়ে বিকেএমইইর সহসভাপতি মোহম্মদ হাতেম জানান, করোনার প্রথম ধাক্কায় যেসব অর্ডার বাতিল হয়েছিল বা ডেফার্ড হয়েছিল। এগুলো আবার ফিরে আসছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ধাক্কায় রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারেই নাজেহাল হয়ে পড়েছে। যেসব অর্ডার এখনো গার্মেন্ট মালিকদের কাছে রয়েছে সেগুলো সময়মতো দিতে পারা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারের ঋণ নির্ভর প্রণোদনা প্রথম করোনার ধাক্কায় কিছুটা কাজ করেছে। কিন্তু সার্বিকভাবে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তাদের মাঝে এই ঋণ তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। ঈদ ও নববর্ষ এই দুটি সময় হলো আমাদের আভ্যন্তরীণ বাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থাকায় অভ্যন্তরীণ বাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সামনের সময়টা হবে খুবই ভয়াবহ। জিডিপি নিয়ে বিশ^ব্যাংকসহ নানা সংস্থা উচ্চ প্রবৃদ্ধির কথা বললেও আসলে ৩ থেকে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও যদি আগামীতে হয় তবেও বাংলাদেশ ভাল করবে।