কাজ থেকে দূরে রেখে কেবল সাহায্য সহযোগিতা করে দরিদ্র ও অতি দরিদ্রদের চালানো যাবে না : অধ্যাপক আবু আহমেদ
আমিরুল ইসলাম : এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, সমাজের নি¤œবিত্তের মানুষের জীবন মানের তেমন উন্নয়ন ঘটেনি। সমাজের কিছু লোকের অনেক উন্নতি হয়েছে, এটা ঠিক। সমাজে যারা প্রভাবশালী, ব্যবসায়ী তাদের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নি¤œ আয়ের লোকজন। ৫০০ মিলিয়ন ডলারও যদি এবছর বাংলাদেশ হারায় তাহলে এর অধিকাংশ হারাবে স্বল্প আয়ের লোকদের থেকে। লকডাউনের কারণে ইনকাম জেনারেট হচ্ছে না। স্বল্প আয়ের লোকজন কাজ করতে পারছে না অর্থনীতির এই অংশটুকু কমছে। অর্থনীতিটা যতোটা স্লো ডাউন হচ্ছে, এর জন্য সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের লোকদের। যারা লকডাউনের কারণে কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যারা দিন আনে দিন খায় তারা।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, নি¤œবিত্তদের দুই-একদিনের জন্য সাহায্য করতে পারবে, কিন্তু তাদের সার্বিক জীবন চলার জন্য তাদের কাজের মধ্যে রাখতে হবে। সেজন্য আমরা বলি, লকডাউনের বিষয়টিকে পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কাজ থেকে দূরে রেখে কেবল সাহায্য-সহযোগিতা করে দরিদ্র ও অতি দরিদ্রদের চালানো যাবে না। কোনো দেশের সরকারই পারেনি। মানুষ চলাচল ও কাজ না করতে পারলে তাদের ইনকাম কোথা থেকে আসবে? অর্থনীতিতে ইনকাম জেনারেট হবে না। সরকারের রাজস্ব আহরণ কম হবে। লকডাউন আর বাড়ানো ঠিক হবে না।
গত বছর করোনা থাকা সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি অন্যদের তুলনায় কিছুটা ভালো করেছে। যেটা হয়েছিলো সেটা যদি আমরা বরবাদের দিকে ঠেলে দিই তাহলে সেটা দুঃখজনক। টিসিবির ট্রাকে এখন দেখা যায় যে, লাইন লম্বা থেকে আরও লম্বা হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে আমরা গরিব থেকে আরও গরিব হচ্ছি। আগে টিসিবির জিনিস কিনতে এতো লোক আসতো না। টিসিবিই বা কতোদিন স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রি করবে? তারাতো সব শহরে যেতে পারছে না। শুধু রাজধানী ঢাকা শহরসহ বড় বড় কয়েকটি শহরে বিক্রি করতে পারছে। একসময় দেখা যাবে তাদেরও বাজেটে সংকুলান হচ্ছে না।
এর সুযোগ নিয়ে কিছু বড় বড় ব্যবসায়ী যারা ইনপুট করে ও সিন্ডিকেট কের তারা সুবিধা নিচ্ছে। ৪০-৫০ জন ব্যবসায়ী যারা সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করে তারা এর সুবিধা নিচ্ছে। অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য যা যা করা দরকার সবকিছু করা উচিত। মানুষের মুভমেন্ট চালু করা উচিত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করতে দেওয়া উচিত। মাস্ক না পরলে জরিমানা করা হোক। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হোক। লোকসমাগম যেন না হয় সেই ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু মানুষের চলাচলের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভালো কিছু অর্জন করা যাবে না। অর্থনীতি নি¤œমুখী হলে এর বড় মূল্য দিতে হবে সমাজের সব লোককে। যারা উচ্চবিত্ত তাদের কিছু আসে যায় না, কিন্তু সমাজের মধ্য ও নি¤œবিত্ত শ্রেণির লোকদের এতে করে অনেক ক্ষতি হবে।