করোনার সঙ্গে যুদ্ধে জয় করছে কৃষি খাত বছরের ব্যবধানে দেশে নতুন দরিদ্র আড়াই কোটি
মো. আখতারুজ্জামান : করোনাকালীন দেশের অর্থনীতিতে নৈপুণ্য দেখিয়েছে কৃষি খাত। তবে জায়ীয় পর্যায়ে এ খাতে রয়েছে আলোচনার বাইরে। ঘুরে ফিরে এসেছে তৈরি পোশাক খাতের কথা। চলমান করোনা প্রভাবে বাংলাদেশে নতুন করে দরিদ্রদের সংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলের মানুষ নতুন দারিদ্র্যের শিকার হয়েছে সব থেকে বেশি।
মঙ্গলবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন।
বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত যা ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে তা ৪৪ শতাংশ। এ হিসাব থেকে জাতীয় পরিসরে নতুন দরিদ্রের এ হিসাব প্রাক্কলন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, করোনার আঘাত সব জায়গায় একইভাবে প্রভাব পরেনি। এলাকা ভেদে একেক রকম প্রভাব ফেলেছে। শহরের তুলনায় গ্রামে তার প্রভাব কমই দেখা গেছে। ফলে শহরের নিম্ন আয়ের লোকেদের বা বস্তিবাসীর জীবন গ্রামের শ্রমজীবীদের তুলনায় অনেক বেশি অরক্ষিত।
তিনি জানান, করোনার প্রভাবে গত বছর শুরু থেকেই শহর থেকে গ্রামে লোকদের ফিরে যাওয়া শুরু হয়। দেখা যায়, ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বস্তিবাসী শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যান। যাদের ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এখনো ফেরেনি। করোনাকালে শহরের বস্তিবাসীর আয় কমেছে। সেইসঙ্গে খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় গত জুনের তুলনায় চলতি বছরের গত মার্চে দ্বিগুণ হয়েছে। ভাড়া বাড়িতে থাকা অধিকাংশ শহরে দরিদ্রের জন্য এটি নির্মম বাস্তবতা। অরক্ষিত অদরিদ্র এবং দরিদ্র নয় এমন শ্রেণির মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ করোনা পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে নিচে নেমে গেছে। সেইসঙ্গে সব শ্রেণিতেই ঋণ গ্রহণের পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার সামগ্রিকভাবে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে তিনি উল্লেখ করেন।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কৃষক খাতের সঙ্গে জরিতরা ছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারী বাকি সব পেশার মানুষের আয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় অনেক কমেছে। পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গ আসলে মূলত সামষ্টিক অর্থনীতির বড় বড় খাত, যেমন তৈরি পোশাক খাতের কথাই উল্লেখ করা হয়। জাতীয় পরিসরে কৃষির কথা সেভাবে উচ্চারিত হয় না বলে তিনি জানান।
ইমরান মতিন বলেন, এমনিতেই দেশের শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ কম। তার উপর করোনা পরিস্থিতিতে নারীরা শ্রমবাজার থেকে আরও দূরে সরে গেছে। পেশা পরিবর্তন করে দিনমজুরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা গ্রহণ করায় দরিদ্রদের দুরবস্থা আরও বাড়ছে।
উল্লেখ্য, দেশে করোনার প্রথম ঢেউয়ের প্রভাব কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। গত বছরের ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই এখনও বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ওই সময় দেশে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়েছিল। নিম্ন আয়ের মানুষ যখন সেই ধাক্কা সামলে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এরপরও করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় গত ১৪ এপ্রিল থেকে সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও