খয়রাতি নয়, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে হবে : ড. আবদুল মজিদ
আমিরুল ইসলাম : এনবিআরের সাবেক এই চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমাদের কর্তৃপক্ষ বা যারা দেশ পরিচালনা করেন তাদেরকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া উচিত। দেশের লোকসংখ্যা, তাদের ইকোনোমিক সেগমেন্ট কেমন? কী ধরনের পদক্ষেপ নিলে কারা কীভাবে তার অভিবাদে পরবে, এই বিষয়গুলো ভালো করে চিন্তা না করে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে উদ্দেশ্য সফল হয় না বরং উল্টো সমস্যার সৃষ্টি হয়। আমাদের অর্থনীতি উন্নত দেশের মতো নয়। আমাদের দেশে নি¤œআয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। ৩০ শতাংশ মানুষ আনফরমাল সেক্টরে কাজ করে। একেবারে দিন এন দিনি খায় তারা। আমাদের দেশের সঙ্গে লকডাউন কনসেপ্ট টা যায় না।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, গতবছর অবস্থা অন্যরকম ছিলো। সাধারণ মানুষর কাছে কিছু টাকা সঞ্চয় ছিলো। সেটা দিয়ে করোনার কিছুদিন মানুষ কষ্ট করে চলতে আগ্রহী ছিলো। এবারের বিষয়টা সরকারের আরও আগে থেকে ভালো করে চিন্তা করার দরকার ছিলো। ইতোমধ্যে আমাদের নি¤œ আয়ের মানুষেরা মানুসিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে সর্বশান্ত হয়ে গেছে। প্রায় পুরো একটা বছর মানুষ বেকার, তবুও কোনো রকমে চালিয়ে নিয়েছে। এখন লকডাউন দেওয়ার কারণে মানুষের জীবন ও জীবিকায় সমন্বয় সাধন করা খুব কঠিন হয়ে গেছে।
আমরা করোনা প্রতিরোধের ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন অমনোযোগী থেকে গেছি। আমরা করোনার প্রতিষেধক তৈরি করেতে পারিনি, সারাবিশ্বেও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি কার্যকর প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। আমরা গত একবছরের অভিজ্ঞতায় অবকাঠামোটা অন্তত গড়ে তুলতে পারতাম, করা উচিত ছিলো। হাসপাতালের বেড বাড়ানো, আইসিইউ বাড়ানো, অক্সিজেন সরবার ঠিক রাখা। একথা মনে করলে হবে না, করোনা মাত্র দু’তিন মাসের জন্য এসেছে আবার চলে যাবে। বাজেটে করোনাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলা হলেও এর বিতরণ, বন্টনে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। করোনাকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই এখন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এর বিভিন্ন ঢেউ বিভিন্ন দেশে এসেছে আমাদের দেশে আসার সম্ভাবনা আছে এমনটা মাথায় রেখে কাজ করা উচিত ছিলো।
করোনার প্রথম দিকে সমাজের বিত্তবানরা গরিব মানুষদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। সবার মধ্যে একটা উদ্যম ছিলো। এখন গতো একবছর ধরে মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে যাওয়ার কারণে ও আয় কমে যাওয়ার কারণে উচ্চবিত্তরা আর আগের মতো এগিয়ে আসছে না নি¤œবিত্তের মানুষদের সহায়তার জন্য। আমরা করোনা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি। একই সমস্যা রয়ে গেছে। পরিকল্পনায়, দৃষ্টিভঙ্গিতে সুদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া এবং সেই অনুযায়ী জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সকলকে অনুরোধ করতে হবে। লকডাউন দেওয়াতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নি¤œআয়ের মানুষগুলো। তাদের জীবিকার ওপর প্রচ-ভাবে একটা আঘাত এসেছে। সেটা ঠেকানোর মতো পুঁজি তাদের কাছে নেই। এখন মানুষ বাঁচানোর বাজেট করতে হবে। এখন আর গতানুগতিক বাজেট দিলে হবে না। এখন বাজেট হবে সরাসরি কীভাবে মানুষের বেকারত্বকে ঠেকানো যায়। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটিরশিল্পকে কীভাবে সচল করা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। সরাসরি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে টাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের খুব ভালো রিজার্ভ রয়েছে। ব্যাংকগুলোতে অলস টাকা পরে রয়েছে। এই টাকা দিয়ে অর্থনীতিকে সচল রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণ মানুষের জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু খয়রাতি দিলে হবে না। মানুষ খয়রাতি চাচ্ছে না, তারা কাজ করতে চাচ্ছে। এখন দুর্যোগকালীন সময় চলছে। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। জাতীয় দুর্যোগ জাতীয় ও ঐক্যবন্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে। করোনা অসাম্প্রদায়িক। করোনা কিন্তু দলমত নির্বিশেষে সকলকে আক্রমণ করছে। সুতরাং করোনাকে মোকাবেলা করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো দলনিরপেক্ষ হতে হবে। ‘মানুষ ও অর্থনীতি বাঁচাও’- এই ধরনের বাজেট দরকার।