ভারতের শহরগুলোতে বেকারত্ব বৃদ্ধি
রাশিদ রিয়াজ : ভারতে কোভিড লকডাউনে বেকারত্ব এখন ডাবল ডিজিটে। ব্যবসা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অভিবাসী শ্রমিকরা লকডাউনের ফাঁদে আটকা পড়ার ভয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গিয়েছে। চাহিদার ব্যাপক হ্রাস শহুরে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ভারতের সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইই) বলছে ১৮ এপ্রিল শহরে বেকারত্বের হার ১০ শতাংশ অতিক্রম করেছে। গত বছর মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটিতে লকডাউন ঘোষণা দেওয়ার পর এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। দি প্রিন্ট
ভারতে এখন শহুরে বেকারত্বের হার ১০.৭২ শতাংশ। গত ১১ এপ্রিল এ হার ছিল ৯.৮১ শতাংশ। ৪ এপ্রিল তা ছিল ৭.২১ শতাংশ। অর্থাৎ গত দুই সপ্তাহে ভারতে শহুরে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে সাড়ে ৩ শতাংশের বেশি। মহারাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাজ্যে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধিতে লোকজন চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন আসছে দিনগুলোতে লকডাউন আরো কার্যকর হলে তা অর্থনীতির ওপর সার্বিকভাবেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভারতের কলকারখানাগুলোতে এখন কাজ বন্ধ। স্থানীয় বাজার ও খুচরা খাত থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, মল ও সেলুনগুলো স্থবির হয়ে পড়েছে।
গত সোমবার রাজস্থান ও দিল্লি মহারাষ্ট্রের মত লকডাউন আরোপ করে। দিনের বেলা দোকানপাট বন্ধ সহ রাতের বেলা লোকজন চলাচলে কার্ফিউ দেওয়া হয়েছে। গুগল মোবিলিটি সূচকে দেখা যায় হাই ফ্রিকোয়েন্সি তথ্য বলছে গত দুই সপ্তাহে বিশেষত ভারতের শহরাঞ্চলে গতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে তীব্র ঘাটতি দেখা গেছে। গুগলের তথ্য বলছে রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, শপিং সেন্টার, থিম পার্ক, যাদুঘর, লাইব্রেরি, সিনেমা হলে মানুষের যাতায়াত হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ শতাংশ। দিল্লি ও গুজরাটে এ হার ৪০ শতাংশ, মহারাষ্ট্রে ৫০, মধ্যপ্রদেশে ৫১ ও ছত্তিশগড়ে ৭৬ শতাংশ। ভারতের জিডিপি’তে সবচেয়ে অবদান রাখে মহারাষ্ট্রের মত শিল্পাঞ্চলীয় প্রদেশ। করোনার লকডাউনে সেখানকার শিল্প-কলখারখানা বন্ধ প্রায়। মুম্বাইয়ের মত কর্মচঞ্চল শহর এখন মৃতপ্রায় নিরব এলাকায় পরিণত হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে পার্ক, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ও ভ্রমণ খাতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। অর্থনীতিবিদ ডি কে শ্রীবাস্তব বলেন বর্তমান পরিস্থিতি কোভিডের প্রথম ওয়েভের সঙ্গে তুলনীয় নয়। গত বছর ভাল ফসল ও গ্রামীণ চাকরির গ্যারান্টি স্কিমের কারণে কৃষিকাজ এবং গ্রামীণ ভারতে তুলনামূলকভাবে উন্নত পরিস্থিতি বিরাজ করছি। কিন্তু এবার শহরাঞ্চলে বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য কোনও উদ্যোগ বা হস্তক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। নির্মাণখাত, উৎপাদন ও সেবা খাতে কর্মরতরা এখন একেবারেই বেকার হয়ে বসে আছে। এদের আপদকালীন সহায়তা দেওয়ার মত অতিরিক্ত কোনো ব্যবস্থা নেই। সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কারণ হচ্ছে লকডাউনের কোনো সীমাবদ্ধ সময় নেই। দীর্ঘমেয়াদে তা স্থায়ী হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে বাধ্য। সিএমআইই’এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মহেশ ভিয়াস বলেন লকডাউন চলতে থাকলে এপ্রিল বা তারও বেশি সময় ধরে নাগরিক কর্মসংস্থানের ক্ষতি হবে। বেতনভোগী কর্মচারীরা অফিসে ফিরে গেলেও প্রত্যাশিত বেতনের চেয়ে কম অর্থ পাবেন এবং লকডাউন পুনরুত্থানের মত ঘটনা সার্বিক পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে তুলছে। তবে শহরের চেয়ে গ্রামীণ অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কম। বাম্পার ফলন ও প্রত্যাশিত বৃষ্টি ভারতের গ্রামীণ অর্থনীতিকে কিছুটা চাঙ্গা করবে। আমেরিকা গ্লোবাল রিসার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ভারতে কৃষকের আয় বরং রবি মওসুমে ১০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে যা গত বছর ছিল ৮.৭ শতাংশ। কেয়ারের প্রধান অর্থনীতিবিদ মদন সাবনাভিস বলেন, যে সব শ্রমিক কাজের অভাবে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন তাদের মাধ্যমে গ্রামে কোভিড সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে কুম্ভ মেলার অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন রাজ্যের যেসব অঞ্চল থেকে এসেছিলেন এবং তারা ফিরে যাওয়ার পর কী প্রভাব পড়বে তা অর্থনীতিতে কি ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে সে নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।