যাদের ঘামে এই দেশ চলে তারা কী খাবে
আর রাজী
দেশের চেহারাটা কতো স্পষ্টভাবেই না ধরা পড়ছে এই সংকটের সময়! দেশের যারা মাথা, তাদের কোভিড-সৃষ্ট প্রাণহানীর শঙ্কা অনেকটাই কমে গেছে। কারণ তারা কোভিডের টিকা, এক ডোজ হলেও; এরইমধ্যে পেয়ে গেছেন।
এমনভাবে এই টিকার কর্মসূচী সাজানো ছিল যাতে ইন্টারনেট-সুবিধাভোগী শিক্ষিত আত্মস্বার্থসচেতন নগরবাসী আগেভাগে টিকা নিয়ে নিতে পারেন। যেভাবে নকশা করা ছিল, সেভাবেই অনেকটা বাস্তবায়িত হয়ে গেছে পরিকল্পনা।
যে শ্রেণীটা সচ্ছল, বসে বসে কয়েক বছর খেতে পড়তে সক্ষম, আবার নিজ স্বার্থ রক্ষায় নানান ঝামেলা বাঁধাতে পারে; তাদের উদ্বেগ আর ঝুঁকি লাঘবের জন্য নানান আয়োজন তো আছেই, তার সঙ্গে আছে লক ডাউন।
বাসায় থাকো, সংসার-সঙ্গম-শয়তানি যা যা ইচ্ছা করো। তোমরা বেঁচে থাকো। ঝুঁকি নিও না। আরও যা যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা সরকার নিশ্চয়ই করবে।
মাস গেলে এদের অনেকে বাঁধা বেতন পান, বাসাভাড়া-দোকানভাড়া ইত্যাদি পান, অনেকে অনেক রকম প্রণোদনা পান, গচ্ছিত অর্থের সুদ পান। নিদেন পক্ষে ক্রেডিট কার্ডে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত বাজার করার সুবিধা পান।
অন্যপক্ষে, যাদের শ্রমে ঘামে এই দেশ, এই সরকার, এই রাষ্ট্র চলে; তারা কী খাবে, কোভিড হলে কোথায় চিকিৎসা পাবে, কবে তাদের টিকা জুটবে, তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার কী হবে, কীভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা বাঁচবে- এসব নিয়ে তেমন ভাবনা নাই, আয়োজন নাই। তাদের বিরুদ্ধে আছে বিধি না মানার অভিযোগ, তাদের নিয়ে আছে অসচেতনতার প্রচার, আছে টিভি-ট্রায়াল, তাদের জন্য আছে লাঠির বাড়ি আর না খেয়ে থাকা!
কি ভয়ানক বৈপরীত্য, কি নিষ্ঠুর অবিচার!
এই কোভিড কি স্পষ্টভাবেই না নগ্ন করে দিল পাপ আর পুঁজে ভরা এই সমাজ, এই দেশের চেহারা!
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সূত্র : ফেসবুক