আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ২
দিশেহারা সাধারণ মানুষ রাজধানীতে মোটা চালের কেজি ৫০-৫২ টাকা
মো. আখতারুজ্জামান : করোনার সংক্রমণ রোধে চলছে লকডাউন। কাজ না থাকায় খেটে খাওয়া দিনমজুরদের আয় অনেকটা বন্ধ হয়েছে। সেইসঙ্গে রাজধানীতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো চাল নেই। নিজেদের আয় আর পণ্যের দামে দিশেহারা সাধারণ মানুষ।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে যে চালের দাম ছিলো ৩৫ টাকা। ৫ বছরের ব্যবধানে সেই মোটা চালের দাম ১৭ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ টাকা। যদিও ২০১৩ সালে এই চালের দাম ছিলো ৩৩ টাকা। সেই হিসেবে দেখা যায়, প্রতিবছর বাড়ছে চালের দাম।
শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে খোলা নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকা কেজি। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। আর গরিবের মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা।
বাজারে চালের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় গত জানুয়ারি মাসে চাল আমদানির শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে সরকার। অবশ্য সরকারের এ ছাড়ের সুফল মেলেনি। সরকার যখন চাল আমদানির শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়, সে সময় রাজধানীর বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে নাজিরশাইল ও মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছিল ৬০ থেকে ৬৪ টাকা। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের কেজি ছিল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। আর মোটা চাল ছিল ৫০ টাকার নিচে।
বাজারে চালের দাম যাতে না বাড়ের এ জন্য চাল আমদানীতে ৪ শতাংশ ট্যাক্স মওকুফের ঘোষাণা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এ ট্যাক্স মওকুফের সুফল আগামী মাসে পাওয়া যাবে বলে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছে। যদিও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। এতে আশা করা হচ্ছে আগামী মাসের শুরুর দিকে বাজারে আসবে নতুন চাল। তখন দাম কিছুটা কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশের বাজারে চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে গত ১৫ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, সরবরাহ কম থাকায় চালের দাম বেশি। করোনার কারণে কৃষকরা ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় চলতি বছর চালের সরবরাহ কম হয়েছে।
৮-১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতির পরও বাজারে চালের দাম অনেক বেশি, এর কারণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ধান, চাল এবং গম প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। আমরা দাবি করি- আমরা খাদ্যশস্যে স্বাবলম্বী। খাদ্যশস্যে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারি সেই বছর যে বছর আমাদের প্রকৃতি স্বাভাবিক থাকে। যদি প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ আসে সেটা আমরা মেইনটেইন করতে পারি না। আমাদের এখানে যে পরিমাণ জমি, দক্ষতা ও সক্ষমতা আছে তা যথাযথ কাজে লাগাতে পারলে আমরা সফল সেই বছর।
অন্যদিকে গত ১ এপ্রিল কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের জানান, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ ছাড়া বোরো ধান ঘরে তুলতে পারলে চালের দাম স্বাভাবিক ও মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে।
বৃহস্পতিবার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মোট ১৮ লাখ টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। এর মধ্যে মিলারদের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন আতপ চাল এবং কৃষকদের কাছ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৬ লাখ টন ধান কেনা হবে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও