মানুষের হাতে সঞ্চয় নেই সরকারি সহযোগিতা বাড়ানো উচিত : আবু তাহের খান
শাহিন হাওলাদার : বিসিকের সাবেক পরিচালক আবু তাহের খান বলেন, করোনার আগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিলো, তখন ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে এবং ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার সামান্য ওপরে ছিলো। এই ৪২ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিলো না, ধারণা করা হয়েছিলোÑ যেকোনো ধরনের আপদে এই মানুষগুলো দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। করোনার মহামারিতে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলা যাওয়া মানুষগুলোই হলো এই শ্রেণির। খুব সহজেই এসব মানুষকে আগের অবস্থানে ফেরত নেওয়া যাবে না।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, করোনার প্রথম ঢেউ সামাল দিয়ে মানুষ মোটামুটি টিকে গিয়েছিলো। নি¤œ আয়ের মানুষ তাদের সঞ্চয় ভেঙে জীবিকা নির্বাহ করেছে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের এ সময়ে মানুষের হাতে আর সঞ্চয় নেই। মানুষ এখন সত্যিকার অর্থেই অনেক কষ্টে আছে। ঢাকায় থেকে গ্রামের মানুষের কষ্ট বোঝা যাবে না। মহামারিতে অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গেলেও সেখানে তাদের কর্মসংস্থান হয়নি, আয়ও বাড়েনি। তবে দেখা যাচ্ছে এ বছর ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। ফলে আশার কাথা হচ্ছে, মানুষ একেবারে না খেয়ে মারা যাবে না। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, কৃষকরা কোনো সময় ভালো ফলনের সুফল পায় না, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে।
তেতাল্লিশে ফলন ভালো হলেও দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিলো। কারণ ফলন যতো ভালোই হোক, তার সুবিধা প্রান্তিক কৃষকরা পান না। প্রায় ৬৬ শতাংশ মানুষের আয় কমে যাওয়াটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। গরিব মানুষকে টাকা ও খাদ্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ ভালো ছিলো। কিন্তু প্রণোদনার টাকা সঠিকভাবে বণ্টন করা হয়নি। স্থানীয় সরকারকে কাজে লাগাতে না পারলে কোনো পরিকল্পনাই কজে আসবে না। সমস্যা ও সংকট তৈরি হওয়ার পর আমরা মোকাবেলার চিন্তা করি। করোনা মহামারি বৈশ্বিক সমস্যা। ফলে কোনো বিষয়ে লকোচুরি না করে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া যেতো। সরকারকে দোষারোপ করার কিছু নেই। করোনা কারণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে দুর্ভিক্ষ হতেই পারে। তাই যাতে খাদ্যের অভাব না হয়, তার বিকল্প চিন্তা-ভাবনা আগেই করা উচিত।
হঠাৎ করে চাইলেও কোনো দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা যায় না। আগাম ব্যবস্থা না নিলে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। যদি দারিদ্র্যতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। খাদ্য মজুদের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। শুধু খাদ্য মজুদ করলেই হবে না, গরিব মানুষ যাতে সঠিককভাবে পায়, তার জন্য বিতরণ ব্যবস্থা আগেই ঠিক করতে হবে। দুর্নীতি যাতে না হয়, সেজন্য কঠোর নজরদারি করতে হবে। আপতকালীন সময়ের জন্য এখনই খাদ্য আমদানি করলে তুলনামূলকভাবে খরচ কম হবে। ঢাকার আরাম-আয়েশের জীবন ফেলে মানুষ শহর থকে গ্রামে যেতে চায় না। করোনার কারণে মানুষ যেহেতু গ্রামে চলে গেছে, সরকারের উচিত সেখানে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। সরকারের জন্য এটা অনেক বড় একটি সুযোগ। কারণ স্বাভাবিক সময়ে মানুষ এভাবে গ্রামে যেতে চায় না। গ্রামে কর্মসংস্থানের জন্য সরকার ব্যাপকভাবে উদ্যোগ নিলে তাদের গ্রামে রাখা সম্ভব হবে। দেশে কৃষির উৎপাদন ভালো হলেও পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে আমরা পিছিয়ে আছি। গ্রামে কৃষির যে উৎপাদন বেড়েছে, সেটাকে বহুমুখীকরণ করা উচিত। চিংড়ি মাছ যেভাবে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়, অন্য মাছও সেভাবে প্রক্রিজাতকরণের ব্যবস্থা করা উচিত। গার্মেন্টেসের মতো গ্রামের শিক্ষিত বেকারদেরও প্রণোদনা দিয়ে কৃষিকাজে উৎসাহিত করা উচিত।