আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ২
বাজারে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কৃষকের ৬০ টাকার তরমুজ ঢাকায় ৬০০ টাকা
মো. আখতারুজ্জামান : রাজধানীতে এ বছর হঠাৎ করে তরমুজ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে দাম বেড়েছে আকাশচুম্বী। ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
কেজি দরে তরমুজ বিক্রির প্রতিবাদ উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। তাদের দাবি কৃষকরা পিস হিসেবে বিক্রি করছে আর অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা তা কেজি দরে বিক্রি করছে। কৃষকরা যে তরমুজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করছে রাজধানীতে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকার উপরে।
যদিও রোজার আগে যে তরমুজ প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে সেই তরমুজ রোজার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। আগে ৫ কেজির একটি তরমুজের দাম ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। ভালো মানের তরমুজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে। এতে ৫ কেজির একটি তরমুজের জন্য ক্রেতার গুণতে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ১০ কেজি ওজনের তরমুজে গুণতে হচ্ছে ৬০০ বা তারও বেশি টাকা। গতবছরও বাজারের সব থেকে বড় এবং ভালো মানের তরমুজ বিক্রি হতো ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। বুধবার থেকে বাজারে অভিযান চালাব। প্রথমে তরমুজের পাইকারি বাজারগুলোতে যেমন- রাজধানীর শ্যামবাজার, সোয়ারিঘাট, ওয়াইজঘাটে অভিযান পরিচালনা করবো। এরপর পর্যায়ক্রমের অন্যান্য বাজারে যাবো।
তিনি বলেন, আমাদের দেখতে হবে কোথায় সমস্যা। কেনো হঠাৎ করে তরমুজ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা কী বলতে চায়। তাদের কথাও আমাদের শুনতে হবে। ১০০ টাকা তরমুজ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হতে পারে না।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, বাজারে এখন প্রচুর তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। সাধারণ মানুষ সেই তরমুজ কিনতে পারছে না। ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার নিচে মধ্যম আকারের কোনো তরমুজ বাজারে নেই। এক সপ্তাহ আগে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া তরমুজ এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। কিন্তু পিস হিসেবে এতদিন বিক্রি হওয়া তরমুজ হঠাৎ কেজি দরে কেন বিক্রি হচ্ছে, তা নিয়ে ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নানা অজুহাত দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়নি। এর ওপর চৈত্রের শুরুতেই প্রচ- গরম পড়তে শুরু করায় বেশি দাম পাওয়ার আশায় পরিপক্ব হওয়ার আগেই মাঠ থেকে তরমুজ তুলে বিক্রি করেছে কৃষকরা।
রাজধানীর মালিবাগে ভ্যানগাড়ির তরমুজ বিক্রেতা মালেক জানান, চার পাঁচ দিন আগেও ৪০ টাকা কেজিতে তরমুজ বিক্রি করেছি। এখন ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি। ১০০ পিস বড় তরমুজ ৪০-৪৫ হাজারের দাম টাকা। প্রতিটির ওজন ৮-৯ কেজি। বিক্রি হচ্ছে ৪৮০-৫৪০ টাকায়। যেটার ওজন সব থেকে বেশি তার দামও বেশি। ৬০০ টাকা পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করেছি। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান জানান, তরমুজ কেজি দরে বিক্রি একদিক দিয়ে ভালো। এতে ক্রেতাদের প্রতারিত হওয়ার প্রবণতা কমে। তবে দাম বেশি হলে সেটা ভালো হবে না। আমাদের দেশের চিরাচরিত নিয়ম হচ্ছে পিস হিসেবে বিক্রি করা।
সাবেক এই সচিব বলেন, রাজধানীতে তরমুজের দাম বৃদ্ধির কারণ কী সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমরা মিডিয়ায় দেখেছি কিছু জায়গায় তরমুজ খেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দাম বাড়ছে নাকি মধ্যস্থতার কারণে। যদি যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে হয় তাহলে পরিবহণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব এলাকায় তরমুজের চাহিদা রয়েছে সেসব এলাকায় তরমুজের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। আর যদি মধ্যস্থতার কারণে হয় এদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও