আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ১
সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ধান চালে লাভ হবে না কৃষকের
মতিনুজ্জামান মিটু : বোরো ধান কাটার সঙ্গে বিক্রিও শুরু হয়েছে। মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা ও ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এরই মাঝে সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় বেধে দিয়েছে ধান চালের দাম। সরকারের পক্ষ থেকে এবার কেজি প্রতি শুকনো ধান ২৭ টাকা এবং আতপ চাল ৩৯ টাকা ও সিদ্ধ চাল ৪০ টাকায় কেনার কথা বলা হয়েছে।
কৃষকের জন্য কেজিতে ১ টাকা এবং মিলারদের জন্য কেজিতে ৩ টাকা দাম বাড়িয়ে এবারের বোরো মৌসুমে সাড়ে ৬ লাখ টন ধান এবং সাড়ে ১১ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেয় সরকার। আগামী বুধবার থেকে ধান এবং ৭ মে থেকে চাল কেনা শুরু হবে। গতবছর বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান এবং ৩৭ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল ও ৩৬ টাকা কেজিতে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের হিসেবে ২৭ টাকা ধান হলে ধান-চালের রেসিও অনুসারে ৬০ কেজি ধানে ৩৯ কেজি চাল হয়। সেই হিসেবে ২৭ টাকা ধান হলে চালের দাম ৪২ টাকা কয়েক পয়সা পড়ে। এতে খুদ-গুঁড়া ইত্যাদি মাইনাস করে ৪০ টাকা আনা হয়।
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার মনা গ্রামের সফল কৃষি উদ্যোক্তা মো. মঞ্জুর হোসেন বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে। আমার ৩৮ বছরের জীবনে এতো তাপমাত্রা অনুভব করিনি। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ভিতরে ভিতরে এ বছর অনেক ধান চিটা হয়ে গেছে। এবার মণপ্রতি ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ৯৫০ টাকা। বর্তমানে এখানে বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৭৮০ টাকায়। সরকারের কেনা দামের সুবিধা দেশের নির্ধারিত কিছু কৃষক ছাড়া আর কেউ পাবেন না। ইন্টারনেটে ফরম পূরণ করে লটারিতে অংশ নিয়ে দেশের তৃণমূলের কোন কৃষকের পক্ষে সরকারি দামে ধান বিক্রি করা সম্ভব হবে না। গুটি কয়েক দালাল ছাড়া সরকারের এই সুবিধা সত্যিকারের কোনও কৃষক পাবেন না। এই অবস্থার থেকে মুক্তির জন্য দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ধান ক্রয় কেন্দ্র চালু করে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে হবে। তাহলে তৃণমূলের কৃষকরা সেখানে ধান দিতে পারবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কিশোরগঞ্জের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল আলম বলেন, অঞ্চল ভেদে ধান চালের উৎপাদন খরচ কমবেশি হয়ে থাকে। এ বছর এই জেলার কৃষকদের কেজি প্রতি ধান উৎপাদনে ২৪ থেকে ২৫ টাকা ও চাল উৎপাদেন কেজিপ্রতি ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা খরচ হয়।
নেত্রকোনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, জমি লিজ নেওয়ার খরচ বাদে চাষ, সার, সেচ, বীজ, চারা, বালাই-আগাছানাশক, শ্রমের মজুরীসহ উপকরণবাবদ কেজি প্রতি ধান উৎপাদনে খরচ হয় ১৫দশমিক ১২ টাকা ও চাল উৎপাদনে খরচ হয় ২১ টাকা ৫৮ টাকা। মাঠে বর্তমানে ক্ষেত থেকে মোটা ধান ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় এবং চিকন ধান ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুকিয়ে ধান বিক্রি করতে গেলে ঐ ধানের উৎপাদন খরচ পড়বে ১০০০ টাকা। শুকিয়ে মিলে নিয়ে সরকারি দামে ঐ ধান বিক্রি করলে পাওয়া যাবে ১০৮০ টাকা। এতে এক মণ ধানে কৃষকের লাভ হবে ৮০ টাকা। এই টাকা থেকে জমির লিজের টাকা বাদ দিলে কৃষকের থাকবে সামান্যই।
মৌলভীবাজারের উপপরিচালক কৃষিবিদ কাজী লৎফুল হক বলেন, এখানে উৎপাদন খরচ হয় ধানে কেজিতে ২১ টাকা এবং চালে ৩২ থেকে ৩২ দশমিক ৫০ টাকা। যশোরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এখানে মণপ্রতি ধান উৎপাদনে খরচ হয় ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা। এক মণ ধানে ৩০ কেজি চাল হয়ে থাকে। ধান কাটার পর ২দিন মাঠে শুকিয়ে সরকারি দামে মিলে নিয়ে বিত্রি করলে মোটাধান মণপ্রতি ১০৫০ টাকায় এবং চিকন ধান ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করা যাবে।
গাইবান্ধার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এই অঞ্চলে কেজিপ্রতি ধান উৎপাদনে ২৪.৯০ টাকা ও চালে ৩৭.৩৫ টাকা খরচ হয়। এখানে মাড়াই করে শুকোনো ছাড়া মণপ্রতি ধান ৭৫০ টাকা ও শুকিয়ে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও