আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যক্রম শুরু হবে : জনতা ব্যাংক এমডি করোনায় বিপদগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ
মাসুদ মিয়া : মহামারী করোনায় বছরের ব্যবধানে দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে। বেড়েছে বিপদগ্রস্ত, কর্মহীন ও ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী মানুষের সংখ্যাও। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমনটি তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সব ব্যাংকগুলোকে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের অসহায় জনগোষ্ঠীর নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য, স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রীসহ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও জীবিকা নির্বাহে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া জরুরি। ২০২১ সালের সিএসআর বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দের মাধ্যমে বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনার আবশ্যকতাও দেখা দিয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব ব্যাংকগুলোকে সিএসআর খাতে আগের বরাদ্দের চেয়ে বেশি ব্যয়ের নির্দেশনা দিয়েছে। এ বছর সিএসআর খাতের বরাদ্দের সঙ্গে নিট মুনাফার আরও অন্তত এক শতাংশ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মানবিক বিবেচনায় সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক সিএসআর খাতে ব্যয় বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করছে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো এমনিতেই সিএসআর খাতে ব্যয় করে। এখন মহামারি বেড়ে যাওয়া ও লকডাউনের কারণে দেশে দরিদ্র বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো যাতে একযোগে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ায় সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমরা চিঠি পেয়েছি। আগামী সপ্তাহ থেকে সিএসআর কার্যক্রম শুরু করবো। তবে এমনিতে আমরা শুরু করেই আছি।
তিনি বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ব্যাংকগুলো সিএসআর খাতে ব্যয় করে। করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করার জন্য সব ব্যাংকের চেষ্টা থাকবে বলে জানান তিনি।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি পেয়েছি। আমাদের সিএসআর নাই। আমরা অন্যভাবে করে থাকি। দেখি কী করা যায়। একসময় সরকার সিএসআর খাত বন্ধ করেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদ হতে অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। বরাদ্দকৃত অতিরিক্ত অর্থ জুনের মধ্যে ব্যয় করতে হবে এবং সিএসআর খাতে বরাদ্দকৃত অতিরিক্ত অর্থ স্থানান্তর নিশ্চিত করে আগামী ১৫ মে মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টকে জানাতে হবে।
ব্যাংকগুলো চাইলে অতিরিক্ত বরাদ্দকৃত এ অর্থ ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরের সিএসআর খাতের বরাদ্দের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারবে। তবে বিশেষ সিএসআর সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে সেটার প্রতিবেদন ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক বরাবর দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন আরও বলছে, বিশেষ সিএসআর বাজেট হতে নিত্যপণ্য, স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রীসহ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহে এবং কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানে সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও জেলা-উপজেলায় ভাগ করে অর্থ ব্যয় করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে বিশেষ সিএসআর খাতে বরাদ্দের ৫০ শতাংশ সিটি করপোরেশন এলাকা এবং বাকি ৫০ শতাংশ অর্থ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছে। এই অর্থ যাতে কোনও বিশেষ এলাকায় কেন্দ্রীভূত না হয় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এগুলো সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের সহায়তায় অথবা শীর্ষ পর্যায়ের এনজিও অথবা এমএফআই সমূহের মাধ্যমে অথবা উভয় প্রকারে প্রস্তাবিত বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। ব্যাংকগুলোকে এ সংক্রান্ত পৃথক হিসাব সংরক্ষণ করতেও বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রদত্ত টাকার পরিমাণ, উপকারভোগীর সংখ্যা, সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের নামসহ বিস্তারিত তথ্য ব্যাংক সংরক্ষণ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলেছে, এ কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমন্বয়ক ও সহায়তাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)। ব্যাংকসমূহ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও শীর্ষ পর্যায়ের এনজিও বা এমএফআইগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এবিবির সহায়তা নেবে। সম্পাদনা : এমএ জামান