আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ১
যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমায় গার্মেন্টসখাতে শঙ্কা
মো. আখতারুজ্জামান : গতবছর বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণের শুরুতে দেশের গার্মেন্টস খাত সংঙ্কটের মুখে পড়ে। গতবছরের মাঝামাঝি সময়ে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় আবারও ছন্দপত হয়েছে দেশের গার্মেন্টসখাতে।
এটা যে শুরু গার্মেন্টসখাতেই হয়েছে তা কিন্তু নয়। পুরো রপ্তানিখাত জুড়ে একই অবস্থা বিরাজ করছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) থেকে পাওয়া তথ্য মতে ২০২০-২১ অর্থবছরে জুলাই থেকে মার্চ এ ৯ মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষমাত্রা ও প্রবৃদ্ধি কোনওটাই অর্জন হয়নি। বরং ঘাটতির মাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৮৯৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১৩৪ কোটি ৭ লাখ ডলার বা ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময় রপ্তানি আয় হয়েছিল ২ হাজার ৮৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। সেক্ষেত্রেও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ।
এদিকে একক মাস হিসাবে মার্চেও রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। এ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ৩০৭ কোটি ৬০ ডলার। সেক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে ১০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কম হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে আয় হয়েছিল ৩১৯ কোটি ডলার। এক মাসে আয় কমেছে ১১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
রপ্তানি তথ্য দেখা যায়, নীটপণ্য রপ্তানির ধারাবাহিক উন্নতি রপ্তানিখাতের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। তবে প্রধান রপ্তানি পণ্য উভেনপণ্য আগের মতোই নেতিবাচক ধারায় রয়েছে।
৯ মাসে এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলারের নিটপণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল এক হাজর ১৯৫ কোটি ডলার। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
ঠিক ফেব্রুয়ারি মাসেও নিট পণ্যে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। একই সময়ে উভেন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১০৮৩ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ কম।
উএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল এর তথ্যে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান গত বছর ৬ হাজার ৪০৭ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করে। ২০১৯ সালের চেয়ে এই আমদানি ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ কম। তবে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে ১ হাজার ৯১ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে দেশটির ব্যবসায়ীরা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ১০০ কোটি ডলার বা সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি করেছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ কম। এই বাজারে চীন ও ভিয়েতনামের পর বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
ইউরোপ-আমেরিকার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাত ইতোমধ্যে হানতে শুরু করেছে দেশের সর্ববৃহৎ রপ্তানিমুখী খাত পোশাক শিল্পে। বাংলাদেশ থেকে বৈশ্বিক পোশাক আমদানি কমে গেছে ২৩ শতাংশ। ফলে স্বভাবতই পোশাক কারখানার মালিকরা রয়েছেন শঙ্কায়। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় ঢেউ সব কিছু পুনরায় অনিশ্চিত করে তুলেছে। সেক্ষেত্রে সরকার রপ্তনিকারকদের স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণসহ প্রণোদনা তহবিল দিয়ে সহায়তা করতে পারে। এ মুহূর্তে রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে পোশাক শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাই নয়। বেতন-ভাতা পরিশোধে গড়িমসিও নয় প্রত্যাশিত।