আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ৩
বাজেটে স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানসহ ৪ খাতে গুরুত্ব দেয়ার প্রস্তাব সিপিডি’র
সোহেল রহমান : চলমান করোনা পরিস্থিতির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আগামী বাজেট হতে হবে সম্প্রসারণমূলক এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবন-জীবিকা টিকিয়ে রাখাই বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। বাজেট প্রণয়নে নীতি-নির্ধারকদের তিনটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এগুলো হচ্ছে- পুনর্বিন্য্যাস, পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন। এছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে চারটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত। সেগুলো হচ্ছে- করোনা রোগীদের জন্য অধিকতর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা; দরিদ্র, নতুন দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো; কর্মসংস্থান তৈরিতে অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ বাড়ানো; কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, রপ্তানিমুখী শিল্প খাত পুনরুদ্ধার এবং এসব খাতে বিদ্যমান কর্মীদের টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করা।
আগামী ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২’-এর জন্য বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ’ (সিপিডি)-এর প্রদত্ত সুপারিশমালায় এসব কথা বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে বাজেট সুপারিশ উপস্থাপন করেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান।
সিপিডি’র প্রস্তাবে বলা হয়, সরকার ৩৫ লাখ পরিবারকে যে পরিমাণ নগদ সহায়তা দিচ্ছে, সেটি আরও বাড়ানো উচিত। একইসঙ্গে পরিবারের সংখ্যা ও নগদ সহায়তার পরিধিও বাড়ানো প্রয়োজন। স্বাস্থ্য খাতে যারা ফ্রন্টলাইনে আছেন, তারা এখনও প্রণোদনার টাকা পাননি। তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য যত দ্রুত সম্ভব প্রণোদনার টাকা ছাড় করা দরকার। এছাড়া কোভিডের কারণে সংস্কার কার্যক্রম যাতে পিছিয়ে না যায়, সেদিকে নজর দেয়ার কথাও বলা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবে।
সিপিডি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত। বাজেটে নতুন কর আরোপ ও করহার বাড়ানো কঠিন হতে পারে। রাজস্ব পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী কৌশল নিতে হবে। যারা কর শনাক্তকরণ নম্বর নিয়েছেন, তাদের করের আওতায় আনা এবং বাজেটে সর্বোচ্চ করহার আগের জায়গায়, অর্থাৎ ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া দরকার। এটা এখন ২৫ শতাংশ রয়েছে।
বাজেট ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক ঋণ ও ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের সুপারিশ করে সিপিডি বলেছে, বর্তমানে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। এ কারণে ব্যাংক থেকে টাকা নেয়ার ক্ষেত্রে সংকোচ না করাটাই যুক্তিযুক্ত হবে। কারণ এখন বেসরকারি খাতে চাহিদা কম।
বাজেট সুপারিশ উপস্থাপনকালে সিপিডি’র সিনিয়র গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ধনীদের আয়কর গতবছর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এটাকে আবার ৩০ শতাংশ ফিরিয়ে নেয়া উচিত। সামষ্টিক অর্থনীতি ও বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এটা সামঞ্জস্য। এছাড়া বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ আর রাখা ঠিক হবে না। আগামী অর্থবছর থেকে এটি বাতিলের প্রস্তাব করছি। কারণ এই সুবিধা করকাঠামোর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
তিনি আরও বলেন, ইন্টারনেটের ব্যবহার এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটা শুধু ধনীরা নয়, অনেক সাধারণ মানুষকে শিক্ষার কাজে বা অন্য কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে। আমরা সুপারিশ করছি এ খাতে সম্পূরক শুল্ক যে ১৫ শতাংশ আছে তা প্রত্যাহার করা। সেইসঙ্গে ১ শতাংশ যে সোর্স ট্যাক্স রাখা হয়েছে তাও প্রত্যাহার করা। শুধুমাত্র ৫ শতাংশ যে ভ্যাট আছে, সেটা রাখা যেতে পারে।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের এখানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেশি দেখানোর একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই জিডিপি যদি কর্মসংস্থান তৈরি করতে না পারে, রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারে, তাহলে এই প্রবৃদ্ধির কোনও অর্থই হয় না। পৃথিবীর অনেকে দেশেই প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছে। তাতে কী হয়েছে ঐ দেশের। তাই জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় এখন নয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্থার সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে, যে ঝুঁকিগুলো নতুন হচ্ছে, সেটাকে কীভাবে সামাল দেয়া যাবে, সেটা বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে। এখন প্রবৃদ্ধিটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। এখন নতুনভাবে মেগা প্রকল্পে না গিয়ে, কীভাবে কর্মসংস্থান বাড়েÑ সেসব প্রকল্পে মনোযোগ দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার গরীব মানুষকে নতুন করে নগদ সহায়তা দিতে যাচ্ছে। সত্যিকারের গরীব মানুষ যাতে এ সহায়তা পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ প্রণোদনার চেয়ে নগদ সহায়তা বেশি উপকারী।
এ টাকায় চাহিদা তৈরি হয়। অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। তাই নগদ সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। আর বছরে দুই থেকে তিনবার নগদ সহায়তা দেয়াও দরকার। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা