চিড়িয়াখানায় জলহস্তী পরিবারে আরো ৩ শাবক
অর্থনীতি ডেস্ক : করোনা মহামারি চোখ রাঙাচ্ছে সারাবিশ্বে। অধিকাংশ দেশ সংক্রমণ রোধে লকডাউন বা বিধিনিষেধ জারি করতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আর সেই বিধিনিষেধের সুফল ভোগ করছে দেশের প্রকৃতি, অভয়ারণ্য, সাফারি পার্ক কিংবা চিড়িয়াখানাগুলো। লোকজনের আনাগোনা না থাকায় প্রাণিকুল যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। তাদের বিনোদিত করতে হয় না কাউকে। এই সময়ে বেড়েছে প্রাণীদের প্রজননও।
বিধিনিষেধের এই সময়ে চিড়িয়াখানার প্রাণিকুল খুব ফুরফুরে মেজাজে আছে। পার করেছে নিজেদের মতো করে সময়। এরই ফলশ্রুতিতে প্রাণিকুলের ব্রিডিং বা প্রজনন ভালো হয়েছে। চিড়িয়াখানার প্রাণীর মধ্যে ভালো ব্রিডিং হয়েছে জলহস্তীর। গত এক বছরের বেশি সময়ে চিড়িয়াখানায় জলহস্তী জন্ম দিয়েছে তিনটি শাবক। খুব শিগগিরই জন্মাবে আরেকটি।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা অ্যানিমেল কেয়ারটেকার (জলহস্তী) নুর আলম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, টিটো আর ডায়নাকে ১৯৮৪ সালে আফ্রিকা থেকে আনা হয় জাতীয় চিড়িয়াখানায়। এদের প্রথম বাচ্চা জলসুন্দরী। ডায়না-টিটোর পরিবারে একে একে জন্ম নেয় জলনুপুর, আগুন্ত, দুরন্ত। জলহস্তীর সবচেয়ে বেশি বাচ্চা হয়েছে করোনার বিধিনিষেধে। ২০২০ সালের লকডাউনে আমরা দু’টি বাচ্চা পেয়েছি। এই বছরের ফাল্গুন মাসের ২ তারিখ আরেকটি বাচ্চা হয়েছে। জলসুন্দরী জন্ম দিয়েছে ফাল্গুনীকে। ফাগুন মাসে জন্ম হয়েছে বলে জলহস্তী শাবকের নাম রাখা হয়েছে ফাল্গুনী।
জলহস্তীর আয়ুষ্কাল সম্পর্কে জানতে চাইলে আলম বলেন, জলহস্তী ৫০ থেকে ৬০ বছর বাঁচে। মিরপুর চিড়িয়াখানায় এখন পর্যন্ত ২১টি বাচ্চা হয়েছে। এখান থেকে দেশে ও দেশের বাইরে জলহস্তী দেওয়া হয়েছে। ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে দু’টি, গাজীপুর সাফারি পার্কে দু’টি, রংপুর চিড়িয়াখানায় তিনটি, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দু’টি ও কুয়েত চিড়িয়াখানায় একটি জলহস্তী দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে আরো ১৩টি জলহস্তী আছে।
জলহস্তীর লালন-পালন কীভাবে করেন জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার কেয়ারটেকার বলেন, আমি আর দুই বছর দায়িত্বে আছি। এরপরে অবসরে যাবো। ওদের (জলহস্তী) ছাড়া কীভাবে থাকবো এই কথা চিন্তা করলে আমার আর কিছু ভালো লাগে না। আমার ছেলেমেয়েকে লালন-পালন করতে যে সময় দিয়েছি এর চেয়ে বেশি সময় আমি ব্যয় করেছি চিড়িয়াখানার জলহস্তীগুলোর পিছনে। সকাল ৭টায় এসেছি বিকেল ৫টায় বাসায় ফিরেছি। করোনার লকডাউনের সময় রাস্তায় পরিবহন বন্ধ থাকায় ৭ থেকে ৮ মাইল পথ হেঁটে চিড়িয়াখানায় এসেছি। শুধু জলহস্তীগুলোকে দেখভাল করার জন্য। আমি আমার সন্তানের মতো ভালোবাসি জলহস্তীগুলোকে। বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা পরিচালক আব্দুল লতিফ বলেন, আমাদের এখানে জলহস্তী অনেক বেশি হয়ে গেছে।
অন্য কোনো চিড়িয়াখানায় প্রয়োজন হলে দিয়ে দেবো। চিড়িয়াখানা যে জায়গা আছে এর মধ্যে ৬ থেকে ৭টি জলহস্তী থাকতে পারে। বেশি জলহস্তী একসঙ্গে রাখতে সমস্যা হয়। বেশি খাবার ও কেয়ারটেকারের প্রয়োজন হয়। জলহস্তীর শেড ভর্তি হয়ে গেছে। অতিরিক্ত প্রাণী হয়ে গেলে সেটা আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সূত্র : বাংলানিউজ। সম্পাদনা : শোভন দত্ত, রেজা