কে বেশি অপরাধী
মোশাররফ হোসেন মুসা
মোসারাত জাহান মুনিয়া নামক একজন সুন্দরী মেয়ের আত্মহত্যার পরে ফেসবুকে অনেকে প্রশ্ন করছেনÑ বসুন্ধরা গ্রæপের এমডি আনভীর সাদাত, মোসারাত জাহান মুনিয়া, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক-কলামজীবী, তাদের মধ্যে কে বেশি অপরাধী?
মানুষের মধ্যে ছয়টি রিপু সক্রিয় থাকে; যথা ১) কাম- যৌনসঙ্গ কামনা, যৌনক্ষুধা (ংবীঁৎমব) ইত্যাদি; ২) ক্রোধ-রাগ, উত্তেজনার বশীভ‚ত হওয়া (অহমবৎবফ) ; ৩) লোভ-লালসা (ঈঁঢ়রফরঃু); ৪) মোহ- মায়া, বিভ্রম (ওষষঁংরড়হ); ৫) মদ-অহঙ্কার, গর্ব, আত্মগৌরব (অৎৎড়মধহপব) ও ৬) মাৎসর্য-পরশ্রীকাতরতা, অন্যের ভাল দেখতে না পারা (ঊহাু)। (ঋণ স্বীকার : শওকত মাহমুদের কলাম)।
মোসারাত জাহান মুনিয়া আত্মহত্যার পর একশ্রেণির কলামজীবী প্রমাণের চেষ্টা করছেনÑমুনিয়া অত্যন্ত লোভী মেয়ে ছিল। লোভেই তাকে পাপের পথে নিয়ে গেছে। অতএব যত দোষ মুনিয়ার। এখানে বলে রাখা ভালÑএদেশে গরীবের মেয়ে সুন্দরী হওয়া অপরাধ। তারপরেও মুনিয়ার পিতা-মাতা নেই। পারিবারিক শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত। দেখাশোনা করতো তার বড় বোন (পিতা-মাতার বিকল্প কিছু হয় না)। সেক্ষেত্রে মুনিয়ার ‘লোভ’ রিপু দ্বারা দিশেহারা হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আকবর সোবাহানের পুত্র আনভীর সাদাত সবরকম শিক্ষা পাওয়ার পরেও ষড়রিপু দ্বারা আক্রান্ত থাকে কেন? শুধু সে কেন, হুইপ পুত্র শারুন (না বারুন) সহ শত শত ধনিপুত্র ষড় রিপু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নানারকম বেআইনি কর্মকাÐ করে যাচ্ছে। ঘটনাটি তিনদিন হয়ে গেলেও বাংলাদেশ প্রতিদিন কোনো নিউজ করেনি। এ ঘটনায় প্রমাণিত হলোÑতারা সকলে বসুন্ধরা গ্রæপের পোষ্য গোলাম। পীর হাবীবুর রহমানের মতো লম্বা কলামজীবী তাকে কোমল মনের অধিকারী বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। পূর্বে পত্রিকায় ধর্ম, কৃষি, রান্না-বান্না এসবের জন্য আলাদা পাতা থাকতো। এটাই নিয়ম ছিল। বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রত্যহ ধর্মজীবীদের লম্বা কলাম ছেপে তাদের সন্তুষ্ট রাখে। আবার তসলিমা নাসরিন নামক নারী সাংবাদিকের কলাম ছেপে ভারসাম্য রক্ষা করে (আমার বিশ্বাস, তিনি মুনিয়াকে নিয়ে প্রতিদিনে কিছু লিখবেন না)। তাহলে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক, সহসম্পাদক, ধর্মীয় কলামজীবীসহ সাংবাদিকরা ষড় রিপু দ্বারা আক্রান্ত না হলেও অত্যন্ত তিনটি রিপু দ্বারা আক্রান্ত। লালন সাঁইয়ের সমুদয় সাধনার মূল কথা হলোÑষড় রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করে মানব স্তরে পৌঁছাতে হয়। উন্নত বিশ্বে রিপু দমনে হাজার রকম সাংস্কৃতিক শিক্ষা এবং প্রাত্যহিক জীবনে তার চর্চা আছে। এখানে শুধু ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে রিপু দমনের কথা বলা হয়। কেউ উপযুক্ত সাংস্কৃতিক বোধের কথা বলেন না। উন্নত গণতান্ত্রিক বিশ্বে কেউ রিপু দমনে ব্যর্থ হলে প্রকাশ্যে ভুল স্বীকার করে। এদেশে ভুল স্বীকার করার হিম্মত খুব কম লোকেরই আছে। আনভীরের পরিবার দেশ ছেড়ে প্রমাণ করেছে, তারা দেখতে হাতিসম হলেও জাগ্রত জনতার কাছে পিপিলিকা ছাড়া কিছুই নয় (আমি লোভের বশে বাংলাদেশ প্রতিদিনে কলাম লিখতাম। এ পত্রিকায় আর লিখবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার পাঠানো কোনো কলাম না ছাপানোর জন্য অনুরোধ করছি)।
অতএব সার্বিক বিচারে কে বেশি দোষী (পাপী)Ñমুনিয়া, না আনভীর গং?
লেখক: গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক।