প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পাননি ৬৯ শতাংশ ব্যবসায়ী
সোহেল রহমান : জরিপে বলা হয়, ৬৯ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজের কোনও কিছুই তারা পাননি। এ জন্য প্যাকেজ বাস্তবায়ন দীর্ঘসূত্রিতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন। তবে এই প্যাকেজের সুবিধা যারা পুরোটা পেয়েছেন তাদের সিংহভাগই বড় ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠান। যাদের আবার সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে।
করোনা মহামারির সময়ে ব্যবসায় আস্থা সংক্রান্ত জরিপের চতুর্থ পর্যায়ের ফলাফল নিয়ে রোববার বেসরকারি সংস্থা ‘সানেম’ ও ‘দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন’-এর ওয়েবিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। দেশের ৮টি বিভাগের ৩৬টি জেলার মোট ৫০৩টি ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ করা হয়েছে।
ওয়েবিনারে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। আলোচক হিসেবে ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরে মাত্র ২ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন অর্থনীতি শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে। মাঝারি মানের পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৩১ শতাংশ এবং দুর্বল মানের পুনরুদ্ধারের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে পরিচালিত তৃতীয় পর্যায়ের জরিপের তুলনায় ২০২১ সালের এপ্রিলে পরিচালিত চতুর্থ পর্যায়ের জরিপে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসায়ীদের ব্যবসার আস্থা অনেকখানি কমে গিয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে পরিচালিত জরিপে বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স বা ব্যবসার আস্থা সূচকের মান ছিল ৫১.০৬, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে পরিচালিত জরিপে এই সূচক ছিল ৫৫.২৪, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে এই সূচক ছিল ৫৭.৯০ এবং ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে পরিচালিত চতুর্থ পর্যায়ের জরিপে এই সূচক ছিল ৪১.৩৯।
জরিপে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়কালে আর্থিক, ফার্মাসিউটিক্যাল, টেক্সটাইল ও খুচরা ব্যাবসা তুলনামূলকভাবে অন্য খাতের চেয়ে ভালো করেছে; পিছিয়ে আছে পরিবহন, রেস্টুরেন্ট, চামড়া শিল্প, হালকা প্রকৌশল শিল্প ও রিয়েল এস্টেট খাত। হালকা প্রকৌশল, পরিবহন এবং রেস্টুরেন্ট খাতের ব্যবসায় আস্থা সবচেয়ে কম।
জরিপের ফলাফল উপস্থাপনকালে ড. সেলিম রায়হান চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল, পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন, তৈরি পোশাক, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রিয়েল এস্টেট খাতে অগ্রাধিকার প্রদানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। এই খাতগুলিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য সুদ হার কমানো, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠনের কথা তিনি উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে এসএমই খাতে ঋণ ও প্রণোদনা প্রাপ্তি বাড়ানোর ওপর তিনি গুরুত্ব দেন। অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো গত বছর প্রথম প্রান্তিকে বড় ধসের পরে আমরা সার্বিক পুনরুদ্ধার দেখতে পেয়েছি, দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগ পর্যন্ত ধারাবাহিক পুনরুদ্ধার দেখা গেছে। কিন্তু পুনরুদ্ধার সবার জন্য একরকম হয়নি। আর্থিক, পোশাকখাত, আইসিটিখাত এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি ভালো করেছে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতে ব্যবসায় আস্থা বাড়ানোর জন্য সরকারকে খাতভিত্তিক গাইডলাইন তৈরি করতে হবে এবং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে মহামারির প্রভাব থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা