আমার দেশ • নগর সংস্করণ • মিনি কলাম • শেষ পাতা
নতুন আপদকালীন বাজেট ঘোষণা করা উচিত : আবদুল মজিদ
আমিরুল ইসলাম : এনবিআরের সাবেক এই চেয়ারম্যান আরও বলেন, সবসময় আমরা যখন বাজেট নিয়ে কথা বলি তখন নতুন বাজেটের কথা বলি। কিন্তু আমরা এটা বলি না বর্তমান বাজেটের বাস্তবায়নের অবস্থা কী? সেটাও কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বলতে হবে। গত বাজেটটি কোনোভাবে আপদকালীন বা জরুরি বাজেট করা হয়নি। একবছর বা তার বেশি সময়েও করোনা যায়নি। করোনা না গিয়ে এটা দ্বিতীয় ধাক্কায় আরও বড় করে আক্রমণ করেছে। ওই সময় যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিলো অর্থনীতিকে সচল করার জন্য তার কিছুটা বাস্তবায়ন হয়েছে কিছুটা হয়নি। সাধারণ মানুষ যেসব সাহায্য পাওয়ার কথা ছিলো সেগুলো সরাসরি তাদের কাছে পৌঁছায়নি। ন্যায্যমূল্যের চাল বিক্রি করার কথা ছিলো, সেটাও দশ-বারো দিনের বেশি চালু রাখা যায়নি দুর্নীতির কারণে। সুতরাং বাজেটে করোনা মোকাবেলার জন্য যেসব বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিলো, সেগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি জানা দরকার। করোনা দেশ থেকে এখনো যায়নি এবং অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক এই কারণে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যেভাবে এটি সংক্রমিত হয়েছে এর প্রভাব যেমন নেপালে পড়েছে, বাংলাদেশে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গত বছর মার্চ মাসে দেশে যখন করোনার আক্রমণ শুরু হলো তখন হাতে তিনমাস সময় ছিলো। তখনকার তিন মাসের পরিস্থিতি ও সামনের পরিস্থিতি অনুযায়ী গত বছরই আপদকালীন বাজেট তৈরি করা উচিত ছিলো। দেশে সাধারণ কার্যক্রম চালানো না গেলে এবং বিশেষভাবে বিশেষ খাতগুলোতে আলাদাভাবে করতে হলে আপদকালীন বাজেট দেওয়া হয়। সম্পদ ব্যবস্থাপনায় যেহেতু একটি বিশেষ ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে সেহেতু আপদকালীন বাজেট করা হয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আপদকালীন বাজেট করেছিলো। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার মনে করেছিলো মার্চ মাসে করোনা শুরু হয়েছে এটা যেকোনো সময় শেষ হয়ে যাবে, তাই করোনার অভিঘাতের কথা বাজেট বক্তৃতায় বলা হলেও রেগুলার বাজেট দেওয়া হলো। আপদকালীন বাজেট হয়নি। এর ফলে বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পে ঠিকই বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং সেগুলোর খরচ কতোটা হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যখাতসহ যেসব জায়গায় বেশি বরাদ্দ দেওয়া দরকার ছিলো, সেগুলোতে কিছুটা বরাদ্দ দেওয়া হলেও এর ব্যবহারও বোঝা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের জনসংখ্যার মধ্যে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের কারণে আমাদের অধিকাংশ জনসংখ্যা হচ্ছে মধ্যবয়সী। তাই করোনার আক্রমণ থেকে কিছুটা সেফ ডিস্টেন্সে আছে বলে মনে হচ্ছিলো।
আমাদের অর্থনীতি গ্রামপ্রধান ও কৃষিপ্রধান। কৃষকরা প্রকৃতির কাছে থাকার কারণে তাদের আক্রমণ তেমনভাবে করেনি। এজন্য আপাতত মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশে করোনা মোকাবেলায় ভালো অবস্থায় আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। অর্থনীতি ইতিমধ্যে একবছরে বলতে গেলে স্থবির হয়ে আছে। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় অর্থনীতি চালু করা যাচ্ছে না। চালু করলেই সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। এরকম পরিস্থিতি আগামী বছরের বাজেট করার জন্য পুরনো বাজেটের অবস্থা এখন কেমন সেটারও একটা সালতামামি লাগবে। আগামী বাজেট ঠিক করার জন্য মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের বাজেট বাস্তবায়নের পরিস্থিতি নিয়ে স্টাডি করা লাগবে। স্টাডি করে তার ভিত্তিতে এবং ধরে নিতে হবে সামনে করোনা থাকবে এবং এটা আরও বেশি আক্রমণ করতে পারে। এগুলো ধরে নিয়ে সে অনুযায়ী জরুরি বাজেট করতে হবে। এ বাজেট কোনো অবস্থাতেই নরমাল বাজেট হবে না, এটা জরুরি সময়ের বাজেট হবে।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। প্রায় দেড় বছর ধরে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ। গত বছরের পুরো শিক্ষাবাজেট ব্যর্থ হয়ে গেছে। শিক্ষকদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। টেবিল চেয়ার পুষতে হচ্ছে। এ খাতে অনুৎপাদনশীল খরচ হয়ে গেছে। এখাতে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোই শুধু নয়, একইসঙ্গে কীভাবে শিক্ষাকার্যক্রম ঠিক রাখা যায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দ্বিতীয় ধাক্কায় হাসপাতালগুলোকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এসব জায়গায় বরাদ্দ বাড়াতে অনুৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ কমাতে হবে। এসব খাতে বাড়াতে গিয়ে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ঘাটতি বাড়লেও বাড়াতে হবে। আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক অর্থ ঋণ দেবে বলে বোঝা যাচ্ছে। সেই অর্থ পাওয়ার ব্যাপারে কী চেষ্টা কী অগ্রগতি সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অপব্যয় ও অপচয় কমাতে হবে। বেসরকারি খাতে ব্যবসায়ীরা বেতন বোনাস কমাতে পারলে সরকারি খাতে কেন নয়। সরকারি খাতেও রেশনালাইজেশন প্রয়োজন হবে। কারণ সরকারি খাতে সবাই বসে বসে উচ্চ বেতন নিয়ে থাকবে, উচ্চ মূল্যের গাড়ি নিয়ে থাকবে ও বেশি খরচ করবে। অথচ কোনো উৎপাদন নেই। তাহলে হবে না। বেতন কাটার বিষয়টি সহজভাবে নিতে হবে। এই বাজেটের সেøাগান হবে ‘জীবন বাঁচাও অর্থনীতি বাঁচাও’ অথবা ‘জীবন ও জীবিকার বাজেট’। সম্পাদনা : রেজা