কোভিডে বাংলাদেশে ধনীদের দান নেই ভারতে ধনীদের দান বেড়েছে ১৭৫ ভাগ
বিশ্বজিৎ দত্ত : কোভিড কালীন বাংলাদেশের ধনীরা ব্যাক্তিগত কত দান করেছেন এর কোন হিসাব নেই। কিন্তু ভারতের ধনীরা তাদের দান বাড়িয়েছেন ১৭৫ শতাংশ। তারা এক বছরে কর্পোরেট দায়বদ্ধতার বাইরে দান করেছেন ১৩৮৬০ কোটি টাকা (১২০৫০ কোটি রুপি)। এরমধ্যে উইপ্রো গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিম প্রেমজি দান করেছেন ৮ হাজার কোটি রুপি। এই হিসাবে তিনি প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি রুপি দান করেছেন। ২০১৯ সালে তিনি দান করেছিলেন ৪২০ কোটি রুপি। ফ্রি প্রেস জার্নাল।
বাংলাদেশ ব্যাংক শুধুমাত্র ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি হিসাব সংরক্ষণ করে। সেখানে ব্যাক্তিগত দানের কোনো হিসাব নেই।
দেশের অন্যকোনো প্রতিষ্ঠান ব্যাক্তিগত দানের কোনো হিসাব সংরক্ষণ করে না বলে জানিয়েছেন রাজস্ব বোর্ডের সদস্য আলমগীর হোসেন। তবে তিনি বলেন, আয়কর আইনে ব্যাক্তিগত দানের উপরে দান কর রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সামাজিক দায়বদ্ধ খাতে গত বছর ২০২০ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দান করেছে ৯৬৭ কোটি টাকা। তা ছাড়া সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে বলেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোভিডকালীন দানের জন্য মুনাফার ১ শতাংশ ব্যায় করতে পারবে। এই ব্যায়ের ৬০ শতাংশ দিতে হবে স্বাস্থ্যখাতে। ৩০ শতাংশ শিক্ষায় ও ১০ শতাংশ জলবায়ু সংক্রান্ত ক্ষতিগ্রস্তদের। অন্যদিকে ভারতের সংবাদ মাধ্যম ফ্রি প্রেসের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ধনীরা কোভিড কালীন তাদের ব্যাক্তিগত দান বাড়িয়েছেন। প্রেমজির পরে সর্বোচ্চ দান করেছেন এফসিএল টেকনোলজির শীভি নাদাল। তিনি দান করেছেন ৭৯৫ কোটি রুপি। এরপরে রয়েছেন রিলায়েন্সের মুকেশ আম্বানি তার দান ৪৫৪ কোটি, বিড়লা গ্রুপের কুমার মঙ্গলম দান করেছেন ২৭০ কোটি, অনিল আগারওয়াল দান করেছেন ২১৫ কোটি, পিরমাল গ্রুপের অজয় পিরমাল দান করেছেন ১৯৬ কোটি, ম্যানডাল নিলকেমি ১৫৯ কোটি, হিন্দুজা ব্রাদার্স দিয়েছেন ১৩৩ কোটি, আদানি গ্রুপের গৌতম আদানি দিয়েছেন ৮৮ কোটি, বাজাজ গ্রুপের রাহুল বাজাজ দিয়েছেন ৭৪ কোটি। এই শিল্পপতিরা তাদের বেশিরভাগ দান করেছেন শিক্ষাখাতে। সেখানে তাদের সম্মিলিত দানের পরিমাণ ৯৩২৪ কোটি টাকা। এরপরে রয়েছে স্বাস্থ্যখাত। সেখানে দানের পরিমাণ বেড়েছে ১১১ শতাংশ।
এর বাইরে সামজিক দায়বদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি ব্যায় করেছে টাটা সন্স। তারা সিএসআর খাতে ব্যয় করেছে ১৫০০ কোটি রুƒপি। এরপরে রয়েছে প্রেমজির গ্রুপ। তারা দান করেছে ১১১২ কোটি রুপি। রিলায়েন্স দান করেছে ৫১০ কোটি রুপি।
আবার ১০ কোটি টাকার উপরে ব্যক্তিগত দান করেছেন ৮৪ জন। নারীদের মধ্যে ৪৭ কোটি রুপি দান করেছেন রোহিনি নিলকানি। তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। এ ছাড়াও ভারতের শিল্পপতিরা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলেও দান করেছেন। রিলায়েন্স গ্রুপ সেখানে দান করেছে ৫০০ কোটি, বিড়লা ৪০০ কোটি ও টাটা ৫০০ কোটি রুপি।
বাংলাদেশের ধনীদের ব্যাক্তিগত দানের অনীহা সম্পর্কে সাবেক এনবিআর সদস্য ও অর্থনীতিবিদ আমিনুর রহমান বলেন, মার্কিন সংস্থা ওয়েলথ এক্সের হিসাবে বাংলাদেশের ২৫০ কোটি টাকার উপরে সম্পদের মালিকদের এই সময়ে সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭ শতাংশ হারে। কিন্তু কোভিডে দেশে গরিব হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। রাষ্ট্রের জিডিপি কমেছে ৩ শতাংশ। সুতরাং কোভিডে সবাই সমান ক্ষতিগ্রস্থ এমন বলা যায় না। দানের সংস্কৃতি এই লাভবানদের মধ্যে নেই। বরং সাম্প্রতিক ধনীদের নানা ধরনের উচ্ছৃখলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের ধনীরা এখনো রাষ্ট্র্রীয় সম্পদ লুট ও ঠিকাদারির লাভের উপরেই ভরসা রাখেন। তাদের পক্ষে দান করা সম্ভব নয়। সম্পাদনা : রেজা