রাজস্ব আদায় এবারের বাজেটে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ : ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
আমিরুল ইসলাম : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর সংকটকালীন সময়ে এবারের বাজেটে সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো রাজস্ব আহরণ। কারণ করোনার কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ব্যয়ের মাত্রা বাড়বে। ইতিমধ্যে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প রয়েছে। দিন-মজুরদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য অনেক বরাদ্দ দিতে হবে। অন্যদিকে রাজস্ব আহরণে বাংলাদেশের যে অর্জন, সেটি খুবই করুণ অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি আমি সব সময় বলে আসছি। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে আমাদের রাজস্ব আদায় নেপালের চেয়েও অনেক কম। কিন্তু নেপালের মানুষের মাথাপিছু জাতীয় আয় আমাদের জাতীয় আয়ের তিন ভাগের দুই ভাগ মাত্র। এরপর করোনার কারণে বিভিন্ন খাতে রাজস্ব আদায় কমছে। ফলে রাজস্ব আদায় এবারের বাজেটে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আর সামগ্রিকভাবে সরকারের আয়ে-ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য ঠিক রাখা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, করোনার কারণে স্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্য খাতে বেশি জোর দেওয়া উচিত। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। কারণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, অবকাঠামোসহ জনবল খাতে বেশি অর্থ লাগবে। দ্বিতীয়ত, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বাড়াতে হবে। করোনার কারণে অনেক লোক চাকরি হারাবে। নিম্ন মধ্যবিত্ত অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে। এসব মানুষকে খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ থাকতে হবে। এ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি কেবল গ্রামকেন্দ্রিক নয়, এবার শহরেও আনতে হবে। আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন ১০০০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচি নিয়েছিলাম। সরকার এটি চালু রেখেছে। এর আওতা বাড়ানো হতে পারে। তবে এ কর্মসূচি যেন শুধু খাল কাটার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। প্রবাসী অনেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরবেন। তাদের দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। তৃতীয়ত, কৃষিতেও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বরাদ্দ দিতে হবে, যাতে সংকটময় এ সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে না পড়ে। এখন বরাদ্দ যাই হোক না কেন, সরকার চাইলে যে কোনো সময় বরাদ্দ বাড়াতে বা কমাতে পারে।
তিনি বলেন, আশঙ্কা করছি, বাজেটে ঘাটতির মাত্রা আগের চেয়ে বাড়বে। আনুপাতিক হারে রাজস্ব আয় যেটাই হোক, ব্যয়ের মাত্রা তার চেয়ে বাড়বে। এ কারণে রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেটি ভাবতে হবে। দ্বিতীয়ত, ঘাটতি অর্থায়ন অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিদেশি অর্থ কীভাবে নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে দাতাদের কাছ থেকে অনুদান নিতে হবে। না-পারলে স্বল্প সুদে কীভাবে ঋণ নেওয়া যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ফান্ডসহ দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ঘাটতি অর্থায়নে দ্বিতীয় উৎস হলো অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থায়ন। এক্ষেত্রে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে যতো কম অর্থ নেওয়া যায়, ততোই ভালো। কারণ, এ দুই খাত থেকে অর্থ নিলে এর খরচ খুব বেশি হবে। সম্পাদনা : রেজা