বিপণিবিতানগুলোতে ভিড় বাড়ছে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে উদাসীন ক্রেতা-বিক্রেতারা
সুজন কৈরী : দোকানপাট-শপিং মল খুলতেই রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। লকডাউন চলমান থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি, মোটরসাইকেল চলাচলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে যানজট। আসন্ন ঈদের বেচাকেনায় ক্রেতা-বিক্রেতার খুশিতে অবেহলায় স্বাস্থ্যবিধি।
সরকার ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট-শপিংমল খোলার অনুমতি দিয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীন দেখা গেছে অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতারা।
বিপণিবিতানগুলোতে প্রবেশপথে জীবাণুনাশক টানেল দেখা যায়নি, ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে চলতে দেখা গেছে। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দোকানেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা ছিল না। তবে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা দেখা গেছে অনেক মার্কেটে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সোমবার তুলনামূলক ক্রেতা কম। বিকেলের দিকে প্রচ- ভিড় থাকলেও সন্ধ্যার পর কিছুটা কমে যায় ইফতারের জন্য। এছাড়া রাত ৮টার পরে মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়। তাই বিকেলে ক্রেতাদের ভিড়ের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন হয়ে যায়।
রাজধানীর সদরঘাট, ইসলামপুর, রাজধানী সুপার মার্কেট, ওয়ারি, বঙ্গবাজার, এনেক্স টাওয়ার, ইসলামিয়া সুপার মার্কেট, স্টেডিয়াম সুপার মার্কেট, মৌচাক-আনারকলি মার্কেট ও পীর ইয়ামিনি মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে কম-বেশি ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। আর এ ভিড়ে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না অনেকেই। এখনও বেশিরভাগ মার্কেটে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা মাস্ক পরিধানে তদারকির কোনও ব্যবস্থা দেখা যায়নি।
সদরঘাট হকার্স, গ্রেটওয়াল, সুলতানা, গুলশান আরা মার্কেটের ভেতরে ক্রেতা সমাগম বেশি দেখা গেছে। ক্রেতাদের একজন থেকে আরেকজনের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা যায়নি। দোকানগুলোতেও কোনও ব্যারিকেড বা পদচিহ্ন দিয়ে দূরত্ব নিশ্চিত করার ব্যবস্থা দেখা যায়নি। এসব মার্কেটের প্রবেশপথে জীবাণুনাশক স্প্রে করার ব্যবস্থা দেখা যায়নি। ইসলামপুর, রাজধানী সুপার মার্কেট, বঙ্গবাজার, এনেক্স টাওয়ার ও মৌচাক মার্কেটের প্রধান গেটে জীবাণুনাশক টানেল দেখা গেছে। মার্কেটগুলোর অনেক দোকানদার বা শোরুমের কর্মচারীদের মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে চলতে দেখা গেছে। মার্কেটে অধিকাংশ ক্রেতার মুখে মাস্ক থাকলেও বিক্রেতাদের অনেকের মাস্ক থুঁতনিতে নামিয়ে রাখতে দেখা গেছে। তবে ওয়ারির নামীদামী শোরুমগুলোতে ট্যানেলের পাশাপাশি ক্রেতারা ফটক দিয়ে প্রবেশের পর তাপমাত্রা মাপার বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করার ব্যবস্থা দেখা গেছে। গ্রেটওয়াল মার্কেটের ব্যবসায়ী নাসির ব্যাপারি বলেন, রমজানের এ সময়টা তাদের ব্যবসার মৌসুম। এ মাসে ব্যবসা করে সারা বছর সংসার চালাতে হয়। ঈদেরও আর বেশি দিন নেই। আমরা শত ভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দোকান খুলেছি। ক্রেতা আসার সঙ্গে সঙ্গেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। তবে মাস্ক ব্যবহার নিয়ে একটু সমস্যা আছে। সারাদিন দোকানের ভিতরে মাস্ক পরে বসে থাকা যায় না। তাই মাঝেমধ্যে একটু মাস্ক খুলে রাখি।
রাজধানী সুপার মার্কেটের কাঁকন ফ্যাশনের মালিক নয়ন শেখ বলেন, করোনার জন্য অনেক দিন বন্ধ ছিলো। আমরা বৈশাখের বাজার ধরতে পারি নাই। সামনে ঈদ গত শুক্রবার থেকে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। আমরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দোকান খুলেছি। ক্রেতাদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। মাস্ক ছাড়া কাইকে দোকানে ঢুকতে দিচ্ছি না।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, সংস্থার অধীনস্থ এলাকার কোনও মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতা মাস্ক না পরলে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে। সোমবার রাজধানী মহাখালীতে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, চলমান লকডাউনে ব্যবসায়ীদের লোকসানের কথা বিবেচনা করে দোকানপাট খুলে দিয়েছে সরকার। তার আগে স্বাস্থ্যবিধি মানবেন বলে লিখিত দিয়েছেন দোকান মালিকরা। এখন ডিএনসিসি এলাকার মার্কেটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে মাইকিং করা হচ্ছে। কাল থেকে আমি নিজে সব মার্কেটে ঘুরবো। কোনও মার্কেটে দোকানি এবং ক্রেতাকে মাস্ক ছাড়া পাওয়া গেলে ওই দোকান বন্ধ করে দেয়া হবে।