ভেষজ উদ্ভিদ মনসাসিজ দিয়ে করোনা চিকিৎসায় সাফল্য
মতিনুজ্জামান মিটু : মনসাসিজ নামের এই উদ্ভিদের রস সেবনে প্রায় ২০০০ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন দাবী এই বিজ্ঞানীর। প্রাণঘাতী মহামারী করোনার তান্ডবে সারা বিশ্ব যখন টালমাটাল ঠিক এমনি একটি সময়ে এইরোগের প্রতিষেধক হিসেবে এমন একটি ভেষজ উদ্ভিদের সন্ধান দিয়েছেন কৃষিবিজ্ঞানী ড. মো. এনায়েত আলী প্রামানিক। তার দাবি এই উদ্ভিদই বাঁচাতে পারে হাজারো মানুষের জীবন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বরেন্দ্র কেন্দ্র, রাজশাহীতে কর্মরত ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. এনায়েত আলী প্রামানিকের দাবি, কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় একটি ভেষজ উদ্ভিদের পাতার রস ব্যবহার করে তিনি অভূতপূর্ব সফলতা পেয়েছেন। তিনি আরও জানান, এই পাতার রস অ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিস রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ জনিত নিউমোনিয়া সারাতে এই পাতার জুড়ি নেই।
বাংলায় মনসাসিজ নামে পরিচিত এই উদ্ভিদেও বৈজ্ঞানিক নাম ইউফোরবিয়া নেরিফোলিয়া লিন। এর ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান এসপিইউরজি ট্রি এবং এটি ইউফোরবিয়াকি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি উদ্ভিদ। ইউফোরবিয়া নেরিফোলিয়া গাছটি দেখতে ক্যাকটাসের মতো এবং কাটাযুক্তকান্ড ট্রাংক এবং শাখা-প্রশাখা রুপান্তরের মাধ্যমে অনিয়মিত (৪-৫টি ধার) আকার ধারন করে। সাধারণত গাছের অনুজ অংশ থেকে পাতা বের হয়। পাতা মাংসল প্রকৃতির এবং চিরসবুজ।
ড. প্রামানিক ই. নেরিফোলিয়া উদ্ভিদের পাতার রসের কার্যকরিতা সম্পর্কে জানান, করোনাভাইরাসের এস প্রোটিন ফুসফুসের কোষের এনজিওটেনসিং হিউমান কনভারটিং এনজাইমরিসেপটর-২ এর মাধ্যমে ভিফিউশন পদ্ধতিতে কোষে প্রবেশ করে। এরপর মেসেঞ্জার আরেএনএ (এমআরএনএ) এর দুটিসাব-ইউনিট ৪০এস এবং ৬০এস এর মধ্যে ৪০এস সাব ইউনিটের সঙ্গে কমপ্লেক্স তৈরি করে জেনোমিক ভাইরাল আরএনএ সিনথেসিস শুরু করে। এ অবস্থায় আক্রান্ত রোগী যদি ই.নেরিফোলিয়া এর পাতার রস খাওয়া শুরু করে তাহলে এটি প্রত্যক্ষভাবে ভাইরাল প্রোটিন সিনথেসিসে বাধা দেয়। এই উদ্ভিদে রয়েছে প্রায় ২৩ প্রকারের ডাই-টারফিনয়েড এবং এক ধরনের গ্লাইকোসাইড। এর মধ্যে ৩ বেটা ফ্রাইডেনাশল সবচেয়ে বেশি কার্যকরী এবং এইটারফিনয়েডের রয়েছে দারুন এন্টিভাইরাল কার্যকারিতা।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এর কিছু টারফিনয়েড এইচআইভি এনএলফোর ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কোষের প্রতিকারে সাফল্যজনকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসে প্রায় ২৭টি রিকাম্বিন্যান্ট আরএনএ থাকার কারণে প্রতিনিয়ত এর প্রতিটি স্ট্রেইনমিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হচ্ছে। কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুস অতিদ্রুত নিউমোনিয়া দ্বারা আক্তান্ত হয় এবং ফুসফুসের ভিতর দিয়ে যে রক্তকনিকা প্রবাহিত হয় তা জমাট বাধার মাধ্যমে ক্ষুদ্র দলার সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন অংগে রক্তপ্রবাহকে বাধা গ্রস্থ করে হঠাৎ স্ট্রোক ঘটায়। যার ফলশ্রুতিতে দ্রুত মানুষের মৃত্যু ঘটছে। এই বিজ্ঞানীর দাবী প্রায় ২০০০ জন করোনা পজেটিভ রোগী এই পাতার রস সেবন করে সুস্থ হয়েছেন। প্রবাহমান পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিস্কার পাতা রোগের মাত্রানুযায়ী দৈনিক ২-৩ টি পাতা চিবিয়ে রস খেয়ে অবিষ্টাংশ ফেলে দিতে হবে। এভাবে প্রতিদিন ২-৩ বার ইনিরাইফোলিয়া এর পাতার রস খেতে হবে পুরোপুরি আরোগ্য হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে ইউফোরবিয়াকিয়াই পরিবারের অধিকাংশ উদ্ভিদ খুবই বিষাক্ত। তবে নেরাইফোলিয়া এর পাতা সরাসারি চিবিয়ে খাওয়া যায়। তাই এই উদ্ভিদটির শনাক্ত করণের সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। এটি চেনার উপায় হচ্ছে পাতাটি ডিম্বাকৃতির এবং পাতার বোটার নিচে কান্ডের সঙ্গে দুটি কাঁটা থাকবে। শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগ যেমন অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ও চেস্টকনজেশন রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় এই উদ্ভিদের ব্যবহার বহুকাল থেকেই প্রচলিত। ঢাকা, রাজশাহী ও সারা বাংলাদেশের সব জেলাসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সর্বত্র এই গাছটি সহজেই পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ কৌলিসম্পদ কেন্দ্র ইউফোরবিয়া নেরিফোলিয়া উদ্ভিদের জার্মপ্লাজমটি সংগ্রহ করেছে। ভবিষ্যতে বিশদ গবেষণার জন্য এই জার্মপ্লাজমটি ওই কেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।