ব্যয় হবে ১৬৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানির প্রস্তাব ক্রয় কমিটিতে
সোহেল রহমান : অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা মজুত সুসংহত করার লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরে ১১ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এ চাল আমদানি করা হচ্ছে এবং আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় প্যাকেজ-১৩-এর আওতায় ভারত থেকে রেলপথে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। কলকাতার প্রতিষ্ঠান ‘সৌভিক এক্সপোর্ট লিমিটেড’ এই চাল সরবরাহ করবে। প্রতি মেট্রিক টন চাল ৩৮৬ ডলার হিসাবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানিতে ট্যাক্স ও ভ্যাট ছাড়া মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৬৩ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বুধবার অনুষ্ঠেয় ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চাল আমদানির জন্য গত ৫ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং ভারতের কলকাতার দুটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। অপর প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছেÑ ‘রেমো এক্সপোর্ট এন্টারপ্রাইজ’। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি মেট্রিক টন চালের উদ্ধৃত দর ছিল ৪০৬ ডলার। এমতাবস্থায় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ‘সৌভিক এক্সপোর্ট লিমিটেড’-কে মনোনীত করা হয়েছে।
চুক্তির শর্ত মোতাবেক আমদানিতব্য চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পাবনার মুলাডুলি সিএসডি, ঈশ্বরদী এলএসডি, জয়পুরহাট এলএসডি, সিরাজগঞ্জ এলএসডি, উল্লাপাড়া এলএসডি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুড়া এলএসডি ও বগুড়া জেলার সান্তাহার সিএসডি-তে পৌঁছে দেয়া হবে।
সূত্রমতে, চাল আমদানির দরপত্র বিজ্ঞপ্তি ও শিডিউলে ক্রয়যোগ্য চালের গুণগত মান সম্পর্কে খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক সুস্পষ্ট নির্দেশিকা দেয়া আছে। সে মোতাবেক বিদেশ থেকে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্য আগমনের পর পণ্য খালাসের পূর্বেই দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, খাদ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত নমুনা খাদ্য অধিদপ্তরের স্থানীয় পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয় এবং পরে সংগৃহীত নমুনা কম্পোজিট করে এক প্যাকেট পরীক্ষার জন্য খাদ্য অধিদপ্তর, ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে তা পরীক্ষা করে গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়। দরপত্রে উল্লিখিত নির্দেশিকার কোনো প্যারামিটারের সাথে পণ্যের প্রাপ্ত গুণগত মান নিম্নমানের হলে দরপত্রে উল্লিখিত সমুদয় চাল প্রত্যাখান করার বিধান রয়েছে।
সূত্রমতে, খাদ্য অধিদপ্তরের গত ২৮ এপ্রিলের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি গুদামে মজুদকৃত মোট খাদ্যশস্যের পরিমাণ ৫ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে চালের পরিমাণ ২ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন এবং গমের মজুদের পরিমাণ ২ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন। সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ নিরাপত্তা মজুত সুসংহতকরণের স্বার্থে উল্লিখিত ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয় করা অত্যাবশক। ইতিমধ্যে ৪ লাখ মেট্টিক টন চাল উন্মুক্ত দরপত্র ও সাড়ে ৬ লাখ মেট্টিক টন জি-টু-জি পদ্ধতিতে সর্বমোট সাড়ে ১০ লাখ মেট্টিক টন চালের ক্রয়াদেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ৭৮ হাজার মেট্টিক টন চাল বাংলাদেশে এসেছে। চলতি অর্থবছরে প্রস্তাবিত ক্রয়সহ আরও সাড়ে ৫ লাখ মেট্টিক টন চাল আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সম্পাদনা : রেজা