আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ৫
এপ্রিলে ২০৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বব্যাপী মহামারীর শুরু থেকেই নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয়। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে এপ্রিল মাসে ২০৬ কোটি ৭০ লাখ (২ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের এপ্রিল মাসের চেয়ে ৮৯ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। গত বছর এই সময়ে রেমিটেন্স এসেছিল ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা করোনার আগে থেকেই রেমিটেন্সে নগদ প্রণোদণা ঘোষণা করেছিলাম। এটা করোনাকালিন ভালো ফল দিয়েছে। আগে রেমিটেন্স তুলতে বেশ কষ্ট করতেন প্রবাসীদের সজনেরা। আমরা সেটাকে কিভাবে সহজ করা যায় সেই কাজ করেছি। এখন আর কাউকে বাড়তি কষ্ট করতে হয় না। তিনি বলেন, আত্মীয়-স্বজনরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ উদযাপন করতে পারেন এজন্য প্রবাসীরা দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। আর তাদের রেমিটেন্সের ওপর ভর করেই রিজার্ভ বাড়ছে। আমরা আশা করছি এই ধারাবাহিকতা চলতে থাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরের ১০ মাসে রেমিটেন্স দুই হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিটেন্স আসেনি।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স আসে দেশে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স আসে এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রবাসীদের মাঝে ঈদ কেন্দ্রীক অর্থ পাঠানোর প্রবণতা নতুন নয়। প্রত্যেক ঈদেই বৈদেশিক আয় বাড়ে। প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়রা ঈদ উৎযাপন যাতে ভালোভাবে করতে পারে এ জন্য বেশি করে অর্থ পাঠায়।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, করোনাকালিন বিশ্ব অর্থনীতি কোন দিকে যাবে সেটা বলা মুশকিল। তাই আমাদের রেমিটেন্স ব্যবহারে শর্তক হতে হবে। সেইসঙ্গে যেসব দেশে আমাদের প্রবাসীরা রয়েছেন সেব দেশে কূনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়াতে হবে। তারা যাতে আমাদের শ্রমিকদের ছাটাই না করে সে বিষয়ে আলোচনা করার পরামর্শ দেন তিনি।
করোনা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বৈদেশিক ও দেশীয় বাণিজ্য স্বাভাবিক হবে না। করোনার থাবা থেকে অর্থনীতি উদ্ধার করতে দরকার একটি রোডম্যাপ, যা এখন পর্যন্ত কোনো দেশই করতে পারেনি। এ অবস্থায় ভোক্তারা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্য কেনাকাটা থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন।
এদিকে ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী এক লাখ টাকা দেশে পাঠালে এর সঙ্গে আরও দুই হাজার টাকা যোগ করে মোট এক লাখ দুই হাজার টাকা পাচ্ছেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি আরও এক শতাংশ অর্থ অফার দিচ্ছে। এতে করে বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিটেন্স প্রথমবারের মতো ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত জুলাই মাসে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়, যা এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
এরপর আগস্ট মাসে রেমিটেন্স কিছুটা কমে হয়, ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে তা আবার বেড়ে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলারে উন্নীত হয়। গত অক্টোবরে ২১১ কোটি ২০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২০৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে রেমিটেন্স ২০৫ কোটি ৬ লাখ ডলার এসেছে। নতুন বছরের শুরুতে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা কমতে শুরু করে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি ৫ লাখ ডলার, মার্চে ১৯১ কোটি ৬৬ লাখ রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। সর্বশেষ এপ্রিলে রেমিটেন্স আসে ২০৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।
আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়। জানা যায়, এখন বৈধ পথে রেমিটেন্স আসছে। রপ্তানিও বেড়েছে। এছাড়া আমদানি ব্যয়ের চাপ কম, দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাইকার বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ও বিশ্ব সংস্থাগুলো অনুদানের কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। তবে সামনে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধ করলে রিজার্ভ আবার কিছুটা কমে যাবে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও