নিউমার্কেট ও বসুন্ধরা শপিং মলে ৩৮ জনকে অর্থদ- স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করায় বন্ধ করে দেয়া হলো চায়না মার্কেট
সুজন কৈরী : স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করায় রাজধানীর পল্টনের চায়না মার্কেট বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় সংগঠনটির মহাসচিব জহুরুল হক ভুঁইয়া ও চায়না মার্কেটের সভাপতি রওনক-এর উপস্থিতিতে মার্কেটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভবিষতে স্বাস্থবিধি মেনে চলা হবে, মার্কেট কতৃপক্ষ এমন মুচলেকা দেওয়ার মার্কেট খোলার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।
এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা যাচাই করতে রাজধানীর নিউমার্কেট ও পান্থপথের বসুন্ধরা শপিং মলে অভিযান চালিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানকালে বেশ কয়েকটি মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে।
চায়না মার্কেটটি বন্ধ করে দেওয়ার কারণ হিসেবে দোকান মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে মার্কেট খোলার অনুমতি দেয় সরকার। তবে সে শর্ত লঙ্ঘন করেছে মার্কেটটি। বিপনিবিতাণে আসা অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক ছিল না। এমনকি দোকানদারদের মুখেও মাস্ক ছিল না। মার্কেটের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছিল না। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ লেখা ব্যানারও ছিল না।
দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে বন্ধ করা হয়েছে চায়না শপিং মল। গত কয়েক দিন এ মার্কেটের সমবায় সমিতি স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছিলো। কয়েক দফা বলার পরও তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছিল না। তিনি বলেন, অন্য কোনও মার্কেটও যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানে, সেগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে রাজধানীর নিউমার্কেট ও পান্থপথের বসুন্ধরা শপিং মলে অভিযান চালিয়েছেন ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত দুই এলাকায় করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সচেতনতা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। নিউমার্কেটে অভিযান পরিচালনা করেন ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব দাস। আর বসুন্ধরা শপিংমলে অভিযান চালান অপর ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক।
নিউমার্কেটে অভিযানের শুরুতে ৪ নম্বর গেট সংলগ্ন অমিত অ্যান্ড ব্রাদার্স নামক একটি কাপড়ের দোকানের ভেতরে থাকা এক ক্রেতা ও একজন সেলসম্যানকে মাস্ক না পরায় দোকানিকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
অভিযান পরিচালনাকালে মাস্ক না পরা বা থুতনিতে নামিয়ে রাখায় অনেককেই জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। অভিযানের খবর পেয়ে অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর আবারও স্বাস্থ্যবিধি উধাও হয়ে যায়।
ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. সঞ্জীব দাস বলেন, সরকার যেদিন থেকে বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে সেদিন থেকেই আমাদের অভিযান চলছে। আমরা চাচ্ছি জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করতে। আমরা বলতে চাই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই চলবে। এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ অভিযান পরিচালনা করব। জনগণ যদি সচেতন না হয় তাহলে অভিযানের সুফল মিলবে না।
জরিমানার বিষয়ে তিনি বলেন, যারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না তাদের সক্ষমতা বিবেচনা করে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হচ্ছে। তবে কেনাকাটার সময় তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অভিযানকালে নিউমার্কেট ও আশপাশের এলাকায় মাস্ক ব্যবহার না করার অপরাধে ২১ জনকে ৬ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এদিকে পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান পরিচালনা করে ১৭ জনকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে কারও নাকের নিচে, কারও হাতে, কারওবা থুতনিতে মাস্ক থাকায় ১৭ জনকে মোট সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ রফিকুল ইসলাম।
মঙ্গলবার দুপুরে বসুন্ধরার নিচ তলায় পূর্ব পাশ থেকে অভিযান শুরু হয়। অভিযানকালে নাকের নিচে মাস্ক পরে ঘোরাফেরার সময় নিশাদ নামে এক দোকান কর্মচারীকে ২০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এরপরই নিচ তলার ওই অংশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও শপিং মলের অন্যান্য ফ্লোরে তখন বৈদ্যুতিক সংযোগ ছিল।
শাওমির মোবাইল শো রুমে মাস্ক না পরে কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলার সময় কর্মচারী আহসানকে ৫০০ টাকা জরিমানার আদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযানকালে ১৫টি দোকানের সামনে যাওয়া মাত্রই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছিল। এক রকম অন্ধকারের মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয় ম্যাজিস্ট্রেটকে। এ বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট বিশেষ কিছু মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন, মার্কেটে বিদ্যুৎ থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না। কোর্ট চলবে।
অভিযানকালে শুধু বিক্রেতাদের নয়, কেনাকাটা করতে গিয়ে হাতে ও থুতনিতে মাস্ক নিয়ে ঘোরাফেরা করায় সাত জনকে জরিমানা করা হয়। ওয়ারেশ নামের একজন গৃহকর্তা স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কেনাকাটা করতে মার্কেটে যান। তার স্ত্রীর মুখে মাস্ক না থাকায় ২০০টাকা জরিমানা গুণতে হয় তাকে। পরে তার স্ত্রী রোখসানা বলেন, পুরো মার্কেটে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। ভ্যাপসা গরম। মুখে মাস্ক রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। যখনই মাস্ক খুলে হাতে নিয়েছি তখনই ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করেছে। অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার থেকে মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করতে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও