সিপিডি-অক্সফাম জরিপ করোনায় দেশের ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে
বিশ^জিৎ দত্ত : করোনায় দেশের ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে। এদের বেশিরভাগই কাজ হারিয়েছেন গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে। আর ৮৬ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। ৭৮ শতাংশ মানুষ তাদের খরচ কমিয়েছে। এরমধ্যে ৫২ শতাংশ মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। আবার অনেকের ঋণ বেড়েছে। কেউ কেউ সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে হারানো বড় একটি অংশ কৃষিতে যোগ দিয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও অক্সফামের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার এক ভার্চুয়াল সংলাপে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহান এবং বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পরিস্থিতি মধ্য মেয়াদী কাঠামো জরুরি। এখানে করোনা পরিস্থিতির অভিঘাত নিয়ে গত বছরের বাজেটের সময় সরকারের নীতি নির্ধারকরা বলেছিলেন, খুব দ্রুতই সমস্যা কেটে যাবে। এখন মনে হচ্ছে তারা যে কত বিভ্রান্তির মধ্যে ছিল, এখন ত বোঝা যাচ্ছে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ টিকে থাকার যে লড়াই করছে, সেখানে সরকার কতটুকু সহায়ক সেটি অবশ্যই বিবেচ্য বিষয়। কারণ ২০ শতাংশ মানুষ বলেছে, তারা সরকারি সহায়তা পায়নি। ফলে সরকারি সহায়তা কতটা কার্যকর হয়েছে, তা অবশ্যই বিবেচ্য বিষয়। করোনা সবার উপরে আঘাত হেনেছে। কারো কারো উপর এই হারটি খুবই বেশি। সরকারের প্রবৃদ্ধি আসক্তি রয়েছে। এর সমর্থনে কোনো তথ্য উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এই বিষয়ে নিয়ে বিতর্ক করা অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো। যে দেশে তথ্য উপাত্ত নেই, সেদেশে জবাব কার্যকর হয় না। আমরা যেন এমন জাতিতে পরিণত না হই, যেখানে প্রকৃত তথ্য উপাত্তকে সরকার ভয়ের চোখে দেখা হয়।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার প্রথম ধাক্কায় ৬২ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন। তবে সময় একই সময় নয়। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তারা এই পরিস্থিতির মুখোমুখী হয়েছেন। বেশিরভাগই গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে, সাধারণ ছুটির সময়ে কাজ হারিয়েছেন। তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের প্রায় ৮৫ শতাংশ এক মাসের বেশি সময় কর্মহীন ছিলেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা জরিপ করি তখন প্রায় সবাই কাজ ফিরে পেয়েছেন। সে হিসেবে মোট কর্মসংস্থান, আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। নতুন কর্মসংস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, কর্মসংস্থানটা এসেছে মূলত কৃষিখাত থেকে। এ সময়ে কৃষিখাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। সেই তুলনায় কর্মসংস্থানের সব চেয়ে বড় জায়গা, সেবা খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শতকরা হারে কমেছে প্রায় দেড় শতাংশ। তবে শিল্পখাতে কর্মসংস্থার প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।’
তিনি বলেন, সেবাখাত থেকে কৃষিতে গেছে কর্মসংস্থান। এটি সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ দেশ উন্নয়ন হলে কাঠামোগত রূপান্তর হয়। অর্থাৎ প্রচলিত খাত থেকে মানুষ আধুনিকখাতে চলে এসেছে। বাংলাদেশে সেটা পেছনের দিকে গেছে।
তৌফিক ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি, যে সব কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলো, তার প্রায় ৯০ শতাংশ হয় স্ব-নিয়োজিত খাতে বা তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করছেন। কেউ কেউ দৈনিক শ্রমিকের কাজ করছেন। ফলে যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, তা মূলত অপ্রাতিষ্ঠানিকখাতে। জরিপে কর্মঘণ্টার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, দৈনিক প্রায় ৪ শতাংশের মতো কর্মঘণ্টা কমেছে। সব থেকে বেশি কর্মসংস্থান যে কৃষি খাত দিয়েছে, সেখানে কর্মঘণ্টা কমে গেছে। এতে বুঝা যাচ্ছে, যেখানে কম সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কৃষি কাজ করা যেত, এখন সেখানে অধিক হারে শ্রমিক যুক্ত হচ্ছে।’ কাজ হারানোরা নতুন কর্মসংস্থানে ফিরলেও আয় কমে গেছে।
তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, কর্মসংস্থান ফিরলেও প্রায় ৪৫ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, আগে তাদের যে আয় ছিল, এখন তার চেয়ে কমেছে। আয় কমার এই হার গড়ে ১২ শতাংশের মতো। এরমধ্যে সব থেকে বেশি কমেছে কৃষি খাতে। প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ আয় কমেছে এখাতে। একই সঙ্গে উৎপাদনখাতেও সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি আয় কমেছে।
তিনি বলেন, বয়স অনুসারেও আয় কমেছে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের আয় বেশি কমেছে। তাদের আয় কমেছে ১৫ শতাংশের ওপর। ৩০-৪৯ বছর বয়সীদের কমেছে ১০ শতাংশ। ‘৪২-৪৩ শতাংশ জানিয়েছে তাদের কাজের অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ। প্রায় ৮৬ শতাংশ জানিয়েছে, তারা আগের মতো যথেষ্ট আয় করছেন না। অর্থাৎ তারা যে ধানের আয়ের প্রত্যাশা করেন, এখন সেখানে উৎপাদন কমেছে। তৌফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন যে কর্মসংস্থান হয়েছে, তার অধিকাংশই যুবক, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। এই বয়সীদের মধ্যে নতুন কর্মসংস্থার প্রায় ৬৫ শতাংশ। ৩০-৬৪ বছরের বয়সীদেরও মধ্যে নতুন কর্মসংস্থান ৩২ শতাংশ। এদের বড় অংশই নারী। এই নারীদের