এসএমই উদ্যোক্তারা ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ পাবেন
মো. আখতারুজ্জামান : করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৩০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেবে এসএমই ফাউন্ডেশন।
বুধবার ঋণ বিতরণ বিষয়ে সারাদেশের এসএমই অ্যাসোসিয়েশন এবং চেম্বারের উদ্যোক্তাদের সাথে অনলাইনে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান।
সভায় জানানো হয়, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় উদ্যোক্তারা ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন। গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের পরিমাণ হবে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। ব্যাংকার গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২৪ সমান মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা যাবে। ব্যাংকের চাহিদাকৃত ডকুমেন্টসহ সম্পূর্ণ বা পরিপূর্ণ ঋণ আবেদনপত্র ব্যাংকের নিকট দাখিলের পর ঋণ মঞ্জুর করে গ্রাহকের অনুকূলে বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। সাধারণভাবে একক ও যৌথ মালিকানাধীন উদ্যোগের অনুকূলে ঋণ বিতরণ করা হবে। তবে প্রান্তিক ক্ষুদ্র, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনার লক্ষ্যে ব্যাংকার গ্রাহক সম্পর্ক ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৫ জন উদ্যোক্তার অনুকূলে গ্রুপভিত্তিক ঋণ বিতরণ করা যাবে।
মফিজুর রহমান জানান, যারা প্রথম দফার প্রণোদনার আওতায় ঋণপ্রাপ্ত হননি, নারী-উদ্যোক্তা, নতুন উদ্যোক্তা অর্থাৎ যারা এখনো ব্যাংক ঋণ পাননি, এবং পশ্চাদপদ ও উপজাতীয় অঞ্চল, শারীরিকভাবে অক্ষম ও তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনে আলাদা হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ করিয়ে দিতে সব প্রতিষ্ঠানের ফোকাল পার্সনও নির্ধারণ করা হয়েছে। ড. মো. মফিজুর রহমান জানান, করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণের জন্য গত রোববার থেকে ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং আইডিএলসি ফাইন্যান্স-এ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে।
খুব শিগগিরই এসএমই ফাউন্ডেশনের সাথে চুক্তি সই হওয়া বাকি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও আবেদন করা যাবে। ফাউন্ডেশনের প্রচলিত ক্রেডিট হোলসেলিং ব্যবস্থার মত উদ্যোক্তারা ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ পাবেন। ঋণের এই সীমা আরও বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। মতবিনিময় সভায় সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের এ প্রণোদনা প্যাকেজের সুফল যেন সত্যিকার প্রান্তিক পর্যায়ে। নেত্রকোনার মত শিল্পক্ষেত্রে অনুন্নত এলাকাগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। ঋণের সুষ্ঠু বিতরণ নিশ্চিত করতে এসএমই ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এসএমই অ্যাসোসিয়েশন, চেম্বার প্রতিনিধি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মতবিনিময় সভা আয়োজন প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
সভায় সিএমএসএমই উদ্যোক্তা হিসেবে ঋণ বা বিনিয়োগের আবেদনপত্র পূরণের পদ্ধতি ও শর্তসমূহ উদ্যোক্তাদের কাছে তুলে ধরা হয়। জানানো হয়, আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যাবে।
প্রাথমিকভাবে ব্র্যাংক ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স এবং লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স থেকে উদ্যোক্তারা ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন উদ্যোক্তারা। এসএমই ফাউন্ডেশনের সাথে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন ক্লাস্টারে সদস্য উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সারাদেশের নারী-উদ্যোক্তা এবং এসএমই ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংগঠন ও অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সুপারিশকৃত এসএমই উপখাত, ট্রেডবডি এবং গ্রুপের তালিকাভুক্ত উদ্যোক্তা এবং সিএমএসএমই খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রথম দফার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ না পাওয়া পল্লী ও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তারাকে ঋণ প্রদান করবে। সভায় বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধিরা অত্যন্ত সহজ প্রক্রিয়ায় দ্রুততম সময়ে কোন ধরণের জটিলতা সৃষ্টি না করে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদেরকে এ ঋণ বিতরণের ব্যবস্থা করার জন্য ফাউন্ডেশনের জোড়ালো ভূমিকা থাকা বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। সম্পাদনা : রেজা