নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ২ • শেষ পাতা
নতুন চার মেরিন একাডেমির উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী যে যেখানে আছেন সেখানেই ঈদ উদযাপন করার আহ্বান
অর্থনীতি ডেস্ক : ঈদ উপলক্ষে ছোটাছুটি না করে যে যেখানে আছেন সেখানেই ঈদ উদযাপন করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘করোনার সময়ে বেঁচে থাকলে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তো দেখা হবেই। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঈদ উপলক্ষে সবাই ছোটাছুটি না করে যে যেখানে আছেন সেভাবেই ঈদ উদযাপন করেন। আর যারা বিত্তশালী আছেন, তারা যারা একটু দুঃস্থ তাদের সহায়তা করেন।’
বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার অবকাঠামো ও জলযানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অন্যদিকে নৌ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে যুক্ত ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা যাতে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য সবার কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা স্বাস্থ্যসুরক্ষা মেনে চলুন। আর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা যাতায়াত একেবারে না পারলেই আপনারা করবেন না। কারণ এই যাতায়াতটা করতে গেলেই কে যে সংক্রমিত হবেন আপনি জানেন না। কিন্তু সে যখন অন্য জায়গা যাবে অনেক লোককে করোনা সংক্রমিত করবে। তখন তাদের জীবন নিয়ে সমস্যা দেখা দেবে। সেটা যাতে না হয় সেজন্যই আমরা কিন্তু যাতায়াত সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু সেই সঙ্গে দেশের মানুষের আর্থিক ও সামাজিক কর্মকান্ডগুলো যেন অব্যাহত থাকে, সেটাও সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেটার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমাদের এই নৌযানগুলো চালান বা পরিচালনা করেন বা যারা ব্যবসা করেন তাদের যাত্রীদের সুরক্ষার দিকটি যেমন দেখতে হবে, যাত্রীদেরও নিজেদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করতে হবে। মনে রাখতে হবে একটা নৌযানে কতজন মানুষ উঠতে পারে বা চড়তে পারে। ঠেলাঠেলি করে একসঙ্গে বেশি উঠতে গিয়ে তারপর একটা দুর্ঘটনা হবে এবং নিজেদের জীবন চলে যাবে। এ ব্যাপারে সবাইকে একটু সতর্ক থাকতে হবে, সজাগ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে যেতে গিয়ে যখন একটা দুর্ঘটনা ঘটে, যে মানুষগুলোর জীবন চলে যায়, আর যারা আপনজন হারিয়ে বেঁচে থাকে তাদের কষ্টের কথাটা একবার চিন্তা করে দেখবেন। একটু ধৈর্য ধরতে হবে। কোনও একটা বিপদ আসলে ধৈর্য ধরতে হবে, সবুর করতে হবে। সেই সবুরটা সবারই করা উচিত এবং নিয়ম মেনে চলতে হবে। সেটাই আমরা চাই। এছাড়া যেসব নৌ-যান চলাচল করে আমাদের প্রত্যেকেরই রেজিস্ট্রেশন থাকা উচিত। রেজিস্ট্রেশন না থাকার কারণে অনেক সময় কে কার কী ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা সেগুলো পাওয় যায় না। তাছাড়া নৌযানের চলতে গেলে কতগুলো নিয়ম মেনে চলতে হবে। হয়তো একটা ঘটনা ঘটলো, সবাই একদিকে ছুটে গেলেন সেটা দেখতে দেশে নতুন চারটি মেরিন একাডেমির পাশাপাশি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার অবকাঠামো ও শতাধিক জলযানের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সমুদ্রগামী জাহাজে দেশের নাবিকদের চাকরির বিশাল সুযোগকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে পাবনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটে নতুন এই চার মেরিন একাডেমি গড়ে তোলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৫২১ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা।
বছরে ৪০০ ক্যাডেটের পাশাপাশি সমুদ্রগামী মেরিনাররা বিভিন্ন ধাপে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন এসব একাডেমিতে।
প্রধানমন্ত্রী এদিন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআইডব্লিউটিএ’র ২০টি কাটার সাকশন ড্রেজার ৮৩টি ড্রেজার সহায়ক জলযান এবং নারায়ণগঞ্জের ড্রেজার বেইজেরও উদ্বোধন করেন।
নতুন ২০টি ড্রেজার নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ এর বহরে ড্রেজারের সংখ্যা হল ৪৫টি। এছাড়া আরও ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ জাহাজ ‘টিএস ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী (দাদা ভাই), বিশেষ পরিদর্শন জাহাজ ‘পরিদর্শী’ এবং বিআইডবি�উটিসি’র উপকূলীয় যাত্রীবাহী জাহাজ ‘এমভি তাজউদ্দীন আহমদ’ ও ‘এমভি আইভি রহমান’ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিআইডব্লিউটিসির বহরকে দক্ষ ও যুগোপযোগী করতে উপকূলীয় যাত্রীবাহী অত্যাধুনিক জাহাজ দুটি তৈরি করা হয়েছে। জাহাজ দুটি সন্দ্বীপ চ্যানেলে কুমিরা-গুপ্তছড়া এবং চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ-হাতিয়া-বরিশাল রুটে চলাচল করবে।
আরও ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বিআইডব্লিউটিসি’র।
প্রধানমন্ত্রী এদিন পায়রায় দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের পুনর্বাসনে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০০টি বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন। পর্যায়ক্রমে ৩ হাজার ৪২৩টি পরিবারকে সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।
সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : বিডিনিউজ, বাংলাট্রিবিউন। গ্রন্থনা : কেএম নাহিদ। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা