আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ৩
আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের পোশাকখাতকে প্রাপ্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে : বাণিজ্যমন্ত্রী পোশাক শিল্পে কর্পোরেট জবাবদিহিতার দুর্বলতম দিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকা : সিপিডি
সোহেল রহমান : কর্পোরেট জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় দেশের অধিকাংশ পোশাক কারখানা এখনো প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। বড় কারখানাগুলোর পক্ষে কর্পোরেট জবাবদিহিতার বেসিক স্তরে পৌঁছানো সম্ভব হলেও ছোট ও বিজেএমইএ-বিকেএমই’র সদস্য-বহির্ভূত কারখানাগুলোতে তা উপেক্ষিত পর্যায়েই রয়ে যাবে। পোশাক শিল্পে কর্পোরেট জবাবদিহিতার দুর্বলতম দিক হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকা। পোশাক খাতে প্রায় ২২ শতাংশ শ্রমিক হয়রানির শিকার হন। ‘কালো তালিকাভুক্ত’ হওয়ার আশঙ্কায় কোনো অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করতে শ্রমিকরা ভীত বোধ করেন।
‘করোনাকালীন সময়ে তৈরি পোশাক খাতের কর্পোরেট জবাবদিহিতা ও শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণের চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক এক জরিপে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’ (সিপিডি) ও ‘সজাগ’ যৌথভাবে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। শনিবার এক ভার্চুয়াল সংলাপে এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। ভার্চুয়াল এ সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি।
ঢাকা ও গাজীপুরের ১০২টি পোশাক কারখানা (এর মধ্যে বড় কারখানা ২৩.৫ শতাংশ ও ছোট কারখানা ৭৬.৫ শতাংশ); ৩০১ একজন সক্রিয় শ্রমিক ও ১০০ জন বেকার শ্রমিকদের তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে সংলাপে জানানো হয়।
জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, ছোট এবং বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্য বহির্ভূত কারখানাগুলোতে কর্পোরেট জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে একটি বোর্ড থাকা দরকার। অন্যদিকে পোশাক খাতের শ্রমিকদের ডাটাবেজ পরিচালনায় বিবিএমইএ-বিকেএমইএ’র পরিবর্তে একটি ত্রি-পক্ষীয় কমিটি থাকা খুব জরুরি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালীন শ্রমিকদের কাজের চাপ অনেক বেড়েছে। প্রায় ৩০ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন যে, তাদের কাজের চাপ বেড়েছে এবং ২২ শতাংশ শ্রমিক অভিযোগ করেছেন, তারা হয়রানির শিকার। তালিকাভুক্ত শ্রমিকরা অনেকেই অধিকার নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে ভীত থাকেন, কারণ তারা কালো তালিকাভুক্ত হতে পারেন। অনেক শ্রমিকদের মজুরি বাড়লেও পরিবারের আয় তুলনামূলকভাবে কমেছে। ফলে তারা খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন করে তা সমন্বয় করছেন।গবেষণায় দেখা যায়, রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পরও শুধুমাত্র বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র তালিকাভুক্ত না হওয়ার কারণে অনেক কারখানা সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সুবিধা পায়নি। সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য ৬৭.৬০ শতাংশ কারখানা আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ৬২.৭০ শতাংশ সহায়তা পেয়েছে। অন্যদিকে ১৭.৬০ শতাংশ কারখানার যোগ্যতাই ছিল না আবেদন করার। আর ১২.৭০ শতাংশ কারখানা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আবেদন করেনি। মূলত বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর তালিকাভুক্তরা সরকারের ওই প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা নিতে পেরেছে। এমতাবস্থায় রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কারখানা যাতে প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ করতে পারে সেই সুযোগ তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
সংলাপে অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকার দিতে মালিক ও শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করবে। সরকার শ্রমিকদের পাশে রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ৪০ লাখ শ্রমিকসহ ১ কোটির মতো মানুষ তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। এ খাত থেকে বাংলাদেশের প্রায় ৮৪ ভাগ রপ্তানি আসে। আমরা অনেকখানি নির্ভরশীল এ পোশাক শিল্পের ওপর। রানা প্লাজা ঘটনার পরে সবাই অনেক আতঙ্কিত ছিল। বর্তমানে আমরা ঘুরি দাঁড়িয়েছি। সত্যি বলতে, পোশাক শিল্প আরও মজবুত অবস্থায় রয়েছে। দেশে শিশুশ্রম নির্মূল হয়েছে। ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা হয়েছে। ধীর ধীরে অনেক এগিয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারীর পর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের পোশাক খাতকে প্রাপ্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, গত বছর পোশাক শিল্পের যে পণ্য ১৫ ডলারের পাওয়া যেত, সেটার বর্তমানে ১২ ডলারে পাওয়া যাচ্ছে। এই অবস্থায় টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এটা হয়ত মালিকপক্ষের কথা হয়ে যায়। তারপরও বলব পোশাক শিল্পের স্বার্থে আমাদের এ বিষয়টি সামনে আনা উচিত। এ জায়গাটা আরও ফোকাস হওয়া দরকার। এ বিষয়ে সবার নজর দেয়া এবং ভোকাল থাকা উচিত। সম্পাদনা : রেজাউল