যাত্রীদের চাপে স্বাভাবিক করা হলো বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ফেরি চলাচল বেশি ভাড়ায় বিকল্প যানে ঢাকা ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ
শোভন দত্ত, জাহিদুল চন্দন ও ইমতিয়াজ আহমেদ : বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল এখন স্বাভাবিক। তাই ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের আর বিড়ম্বনা পোহাতে হবে না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) বাংলাবাজার ঘাট ম্যানেজার সালাউদ্দিন।
সোমবার তিনি বলেন, ‘এখন থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক। ঘাটে আটকে পড়া কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করে দিয়েছে। এখন সব ধরনের ফেরি চলাচল করবে। তাই ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের আর বিড়ম্বনা পোহাতে হবে না।’
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঘাটে ফেরি চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন ঈদ সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষ। শুধুমাত্র লাশ ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি কাজে ব্যবহৃত পরিবহনের ফেরি পারাপারে অনুমতি দেয়া হয়। তারপরও ঘাটে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও অনেককে ফেরিতে উঠতে দেখা গেছে।
বাড়ি ফিরতে নানাভাবে অনুৎসাহিত করা হলেও গত তিন দিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়ায় ভিড় করেছিলেন হাজার হাজার যাত্রী। দিনে ফেরি বন্ধ রেখে, রাতে পণ্যবাহী যান পারের নির্দেশনা থাকার পরেও মানুষের ভিড় বেড়েই চলছিলো। বিভিন্ন জরুরি পরিবহন পারাপারের জন্য থাকা ফেরিতে করে পারাপারও হয়েছেন তারা। ফেরিটিতে যাত্রী ছাড়াও পাঁচটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ছিল। সকাল থেকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ফেরিতে নদী পার হওয়া সুযোগ পেয়ে যাত্রীদের উল্লাস করতে দেখা যায়। সোমবার সকাল ১০টার দিকে ডাম্প ফেরি যমুনা দুই নম্বর ঘাটে নোঙর করে। ফেরিটিতে পাঁচটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স তোলার সঙ্গে সঙ্গেই ঘাটে অপেক্ষারত হাজার হাজার যাত্রী উঠে পড়েন। পরে সোয়া ১০টার দিকে যাত্রী ও অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফেরিটি বাংলাবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
অবশ্য ঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সড়কে বিজিবির চেকপোস্টের কারণে কোনও যাত্রীবাহী যান ঘাটে প্রবেশ করতে পারছে না। তবে নানা পথ ঘুরে, পায়ে হেঁটে, পাহারা গলে ঠিকই যাত্রীরা পৌঁছে যাচ্ছেন ঘাটে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের উপ-ব্যবস্থাপক (এজিএম) শফিকুল ইসলাম বলেন, জরুরি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্য যমুনা নামের একটি ডাম্প ফেরি সকালে ছেড়ে গেছে। পরে বিকেলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে।
দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নানা উপায়ে ঝুঁকি নিয়েই রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। বাদ যাচ্ছে না মোটর সাইকেলে যাত্রাও। একাধিক যাত্রী নিয়ে কয়েকশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছেন মোটরসাইকেল চালকরা। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ। তাতে কি? আপনজনের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির কাছে সব ভোগান্তিই যেন তুচ্ছ। বাস ছাড়া সড়কে আছে সব যানবাহন। একাধিক যাত্রী নিয়ে ঝুঁকির মধ্যেই মোটর সাইকেল নিয়ে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন চালকরা। পেটের তাগিদের কাছে তুচ্ছ জীবনের মায়া।
যাত্রীরা বলছেন, নিরুপায় হলেও ফিরতে হবে আপনজনের কাছে। আছে ঝুঁকি, তবু মোটরসাইকেলে পাড়ি দীর্ঘপথ।
চেকপোস্ট বসিয়ে বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ মোসাদ্দেক হোসেন। করা হচ্ছে সচেতনও। রোববার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রাইভেটকার চাপায় প্রাণ গেছে এক মোটরসাইকেল আরোহীর।
অন্যদিকে, গত দুই দিনের মতো আজও জেলেদের মাছধরার ট্রলারে করে পদ্মা নদী পার হচ্ছেন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। তবে, নৌপুলিশের অভিযানও অব্যাহত আছে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মোট ১৩টি ট্রলার জব্দ করা হয়েছে। মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবীর এ খবর নিশ্চিত করেছেন।তিনি আরও জানান, শিমুলিয়া ঘাটের পাশের এলাকা, মাওয়া মৎস্য আড়ত, কান্দিপাড়া থেকে ১৩টি ট্রলার জব্দ করা হয়। এসময় ট্রলার চালকসহ ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ হিলাল আহমেদ জানান, ফেরি চলাচল বন্ধ থাকলেও অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দুটি ফেরি ছেড়ে গেছে। ঘাটে থাকা যাত্রীরাও তাতে উঠে পড়েন। ঘাটে বর্তমানে সাড়ে চার শতাধিক পণ্যবাহী যানবাহন ও কয়েক হাজার যাত্রী রয়েছেন।
এদিকে গত দুই দিনের মতো সোমবার সকাল থেকেও হাজার হাজার যাত্রী শিমুলিয়া ঘাটে উপস্থিত হতে থাকেন। নিষেধাজ্ঞা ও পথে পথে বিজিবি-পুলিশের চেকপোস্ট সত্ত্বেও যাত্রীরা পায়ে হেটে ঘাট এলাকায় এসে জড়ো হতে থাকলে তৈরি হয় গাদাগাদি ভিড়। ঘাটে ভিড় করা এসব যাত্রীদের মধ্যে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি।
পাটুরিয়া ঘাটের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার (কিমি) আগেই চেক পোস্টে আটকে দেওয়া হচ্ছে ঈদযাত্রার গাড়ি ও যাত্রীদের।
এদিকে সোমবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলার প্রবেশ পথ বারবারিয়া ব্রিজের পশ্চিম পাশে পুলিশের চেক পোস্ট বসিয়ে গণপরিবহন ও যাত্রীদের ঘুরিয়ে দিতে দেখা যায়। শতশত গাড়ি ও যাত্রী কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকে চেক পোস্ট ফাঁকি দিয়ে হেঁটেই চলে যাচ্ছেন পাটুরিয়া ঘাটের দিকে।
দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের নানা বয়সের মানুষ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে ছুটে আসছেন মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের দিকে। কিন্তু জেলার প্রবেশ পথে চেক পোস্টে আটকে যাচ্ছেন তারা।
চেক পোস্টে দায়িত্বরত সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, জেলার প্রবেশ মুখে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে, যাতে করে জরুরি সেবায় নিয়োজিত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন পাটুরিয়া ঘাটে যেতে না পারে। আর সেজন্য ঢাকা থেকে আসা গাড়িগুলোকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেক সময় কিছু গাড়ির বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হচ্ছে।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে যেসব যানবাহন ভাড়া করে পাটুরিয়া ঘাটের দিকে যাচ্ছে ওই সব যানবাহন ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে হেঁটে যাওয়া যাত্রীদের বিষয়ে কোনও নির্দেশনা না থাকায়, তাদের কিছু বলা হচ্ছে না।
বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১ হাজার ৮০২টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী পরিবহনের সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৭৭৯ আর ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী পরিবহনের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ২৩টি। যা অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ।
এতে রোববার ভোর ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত মোট টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু পূর্ব সেতু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম ও সেতু কর্তৃপক্ষের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা