সমলয় চাষের বিকল্প নেই ধান চাষ লাভজনক করার উপায় উৎপাদন খরচ কমানো
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : ধান চাষ লাভজনক নয়। এটিকে লাভজনক করার অন্যতম উপায় হলো উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করা। আর উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করতে হলে সমলয় চাষের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর ও উর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন জানান, ফসল কাটার সময় শ্রমিক সংকট এখন বাংলাদেশে নিত্যবছরের সমস্যা। শিল্পায়নের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে কয়েক দশক ধরে মানুষ শহরমুখী। তাই প্রতিনিয়ত কমছে কৃষি শ্রমিক। সামনে এ সংকট আরও বাড়বে বৈ কমবে না। এর একটা সমাধান হতে পারে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ। কেননা আধুনিক কৃষি যন্ত্রগুলো অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ করে। আর এগুলো চালনার জন্য লোকও লাগে কম। কিন্তু যান্ত্রিকীকরণের জন্য দরকার বড় জমি, যৌথ খামার বা সমবায়ী কৃষিব্যবস্থা।
উত্তরাধিকার বিভাজনসহ নানা কারণে দেশের জমিগুলো ছোট ছোট। কৃষকেরা এগুলো জোড়া লাগানোর ব্যাপারেও খুব একটা উৎসাহী নয়। তাছাড়া কৃষি যান্ত্রিকীকরণের আরেকটি অন্তরায় হলো সব কৃষক একই সময়ে চাষাবাদ করে না। নানা জাতের ও সময়ের বীজ নির্বাচন করায় সবার বীজতলাও একসময় গজায় না, ফলে চারা রোপণের সময়ও হয় ভিন্ন, ধানও তাই একসময়ে পাকে না। কর্তন কাজের জন্য বিভিন্ন জমিতে আলাদা সময়ে কৃষি যন্ত্রগুলোর ব্যবহার করে তাই অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী হয় না।
এ ক্ষেত্রে কৃষিবিজ্ঞানীরা ভাবলেন, কোন একটি এলাকার কোন একটি কৃষিপণ্য চাষের পুরো প্রক্রিয়াকে যদি একই সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা যেত, তাহলে কিন্তু জমির আল বজায় রেখেও লাভজনকভাবে যন্ত্র ব্যবহার করা যেত। তাই এর একটা কার্যকরি উপায় বের করেছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। পদ্ধতিটির নাম দিয়েছেন সমলয় চাষাবাদ বা সিসক্রোনাইজিং কালটিভেশন। বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকীকরণের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। যার একটি হচ্ছে সমবায়ভিত্তিক সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতি।
যেখানে একটি মাঠে বা মাঠের একটি অংশের সব কৃষক সবাই মিলে একসঙ্গে একই জাতের ধান একই সময়ে যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করবেন। এ পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে চারা তোলা, চারা রোপণ ও ধানকর্তন সব প্রক্রিয়া যন্ত্রের সাহায্যে সমসময়ে সম্পাদন করা হবে। সমলয়ে ধান আবাদ করতে হলে চারা তৈরি করতে হবে ট্রেতে। ট্রেতে চারা উৎপাদনে জমির অপচয় কম হয়। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। কৃষক তার ফসল একত্রে মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পারেন। কারণ একসঙ্গে রোপণ করায় সব ধান পাকবেও একই সময়ে। তখন ধান কাটার মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে সব ধান কর্তন ও মাড়াই করা যাবে। এসব কারণে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের ব্যবহার সহজতর ও বৃদ্ধি হবে। ধান চাষে সময়, শ্রম ও খরচ কম লাগবে। এ ক্ষেত্রে কৃষক লাভবান হবেন এবং কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ পদ্ধতির প্রবর্তন সহজ হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম সমলয়ে চাষাবাদ কার্যক্রম প্রদর্শনী আকারে দেশের ১২টি জেলার ১২টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করে। এটি ব্যাপক সফলতা লাভ করায় ২০২০-২১ অর্থবছরেও কার্যক্রমটি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। চলতি বোরো মওসুমে আরো বিস্তৃত পরিসরে ৬১টি জেলায় এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। এটি বাস্তবায়নের সরাসরি দায়িত্বে আছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আর বিভিন্নভাবে কারিগরি সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ কার্যক্রম নেওয়ায় একদিকে ধানের নতুন নতুন জাত দ্রুত সম্প্রসারণ এবং ধান চাষে যন্ত্রের ব্যবহার বহুলাংশে বাড়বে। সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতিতে এক প্লট থেকে অন্য প্লটে কৃষিযন্ত্র পরিবহণে সময়ের অপচয় রোধ করা যাবে। ছোট আকারের জমিতেও লাভজনকভাবে পূর্ণ দক্ষতায় কৃষি যন্ত্র চালানো যাবে। কৃষি যন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে। সম্পাদনা : রেজা