ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে পারে সম্ভাবনাময় ফসল পেরিলা
মতিনুজ্জামান মিটু : দিন দিন বাড়ছে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা। কিন্তু দরকারের চেয়ে উৎপাদন কম হওয়ায় বাড়ছে আমদানি ব্যয়। বিভিন্ন সূত্রের বরাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. জাহিদুল আমিন ও কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ঝিনাইদহের প্রশিক্ষক কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, বাংলাদেশে মোট ভোজ্যতেলের চাহিদা ৫১.২৭ লাখ টন, যার মধ্যে ৪৬.২১ লাখ টন আমদানি করতে হয়। এর দাম ৩.২০ বিলিয়ন ডলার, যা টাকায় ২৭ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।
এআইএস এর তথ্য মতে, দেশে সরিষা, চীনাবাদাম, তিল, তিসি, সয়াবিন ও সূর্যমুখীসহ বিভিন্ন তেলফসলের চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে সরিষা, তিল এবং সূর্যমুখী থেকেই সাধারণত তেল বানানো হয়। বর্তমানে দেশে আবাদি জমির মাত্র ৪ ভাগে তেল ফসলের আবাদ হয়। দেশে মোট ৪.৪৪ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়, যা থেকে ৬.৫ লাখ টন সরিষা এবং সরিষা থেকে ২.৫০ লাখ টন তেল উৎপন্ন হয়।
আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং মানসম্মত ভোজ্যতেলের ফলন বাড়াতে দেশে নতুন তেলফসল ‘গোল্ডেন পেরিলা’ নিয়ে এসেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। দীর্ঘদিন গবেষণা করে পেরিলাকে দেশীয় আবহাওয়ায় অভিযোজন করাতে সক্ষম হয়েছেন এ গবেষক দল। পেরিলা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসমৃদ্ধ একটি ভোজ্যতেলের জাত। সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) বাংলাদেশে অভিযোজিত পেরিলার একটি জাত।
বাংলাদেশে জাতটি সম্প্রসারণের জন্য কাজ করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. এইচ এম এম তারিক হাসান, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. আ ফ ম জামালউদ্দিন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২৭তম বিসিএস ক্যাডারের অফিসার মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদার। ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘদিন গবেষণার ফলে ফসলটি বাংলাদেশের প্রচলিত কৃষি মৌসুমে চাষের উপযোগিতা নির্ধারণ করে ৪টি ফসলসহ ফসল বিন্যাসের উপযোগী চাষাবাদ পদ্ধতি নির্ধারণ সম্ভব হয়। এর ফলে ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি ফসলটি সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) জাত হিসেবে নামকরণপূর্বক কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ড অবমুক্ত করে। ইতিমধ্যে দেশের ১২টি জেলায় এ ফসলটি পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করা হচ্ছে এবং এর বাম্পার ফলন আশা করা যাচ্ছে। এ ফসলটির বিশেষত্ব হলো এর বীজ থেকে পাওয়া তেলে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ লিনোলিনিক এসিড (ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের প্রধান উৎস) যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। এর বীজ থেকে শতকরা ৪০ ভাগ তেল আহরণ করা যায়, যার প্রায় ৯১ ভাগ অসম্পৃক্ত ফ্যাটিএসিড। দেশীয় পদ্ধতির প্রচলিত ঘানিতে এ বীজের তেল আহরণ করা যায়।
সাউ পেরিলা-১ (গোল্ডেন পেরিলা বিডি) জাতটি লেমিয়াসি (মিন্ট ক্রপ) পরিবারভুক্ত। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৯০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। বীজ সাদা, ধূসর, গাঢ় বাদামি হতে পারে এবং হাজার বীজের ওজন ৩.৫ থেকে ৪.০০ গ্রাম। জাতটি খরাসহনশীল। খরিফ-২ তে চাষ করা যায়, যা শীতকালীন চাষনির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে। হেক্টরপ্রতি ১.৩ থেকে ১.৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
এর তেল শরীরের জন্য বেশ উপকারী বিশেষত হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। এতে শতকরা ৫০ থেকে ৫৫ ভাগ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা হার্টের জন্য খুব উপকারী। মোট ফ্যাটের শতকরা ৯১ ভাগ অসম্পৃক্ত। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। এটি চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
সাউ পেরিলা-১ এর বীজ থেকে পাওয়া তেল পরিশোধন করে এবং পরিশোধন ছাড়া দুইভাবেই খাওয়া যায়। এ তেল বিভিন্ন ধরনের রান্নার কাজে, সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, আচার ও চাটনি তৈরিতে এবং খাবারের সুগন্ধি বাড়ানোসহ নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও