ছয় কারণে চতুর্থবারের মতো সংশোধন হচ্ছে আশ্রায়ন-২ প্রকল্প
সোহেল রহমান : মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা ২০২০ বাস্তবায়নসহ ছয় কারণে চতুর্থবারের মতো সংশোধন হচ্ছে আশ্রায়ন-২ প্রকল্প। অতি সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকে প্রকল্পটি চতুর্থ বারের মত সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা অনুযায়ী একক গৃহ নির্মাণের জন্য ২ শতাংশ খাস জমিতে ‘ক’ শ্রেণির পুনর্বাসন এবং যার জমি আছে ঘর নেই এরূপ ‘খ’ শ্রেণির পরিবার পুনর্বাসনের জন্য নতুন ঘরের ডিজাইন অনুমোদন, ভূমিহীন ও গৃহহীন ‘ক’ শ্রেণির পরিবার পুনর্বাসনের জন্য জমি ক্রয়, আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, পুরাতন জরাজীর্ণ ব্যারাক পুনঃনির্মাণ এবং প্রকল্পের বাস্তবায়নের সময়সীমা বর্ধিতকরণ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ছিন্নমুল, গৃহহীন ভূমিহীন পরিবারকে জমি, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, বিদ্যুৎ ও চলাচলের জন্য পাকা রাস্তা ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা দিয়ে পুনর্বাসন করা এবং পুনর্বাসিতদের ঋণ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মানির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য ১৯৯৭ সাল থেকে আশ্রায়ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। এ ধারাবাহিকতায় ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র পরিবার পুনর্বাসন, ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণসহ তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য আশ্রায়ন-২ প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী ৩ লাখ ৫০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছেÑ ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৭টি ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় পরিবার বাছাইকরণ, ৫ হাজার ১৪৯টি পাকা ব্যারাক, চরাঞ্চলে ৫ হাজার ৭৮টি সিআইসিট ব্যারাক, দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ব্যারাক নির্মাণ, ১২০টি বহুতল নির্মাণ, ১ হাজার ১১০টি বহুতল ভবন, সকল প্রকল্প গ্রামে অগভীর গভীর নলকূপ স্থাপন এবং ৫৬৪টি ঘাটলা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বক্স কালভার্ট, পাকা ড্রেন ও স্লোপ প্রোটেকশন নির্মাণ ইত্যাদি।
জানা যায়, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ১ হাজার ১৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য আশ্রায়ন-২ শীর্ষক মূল প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। মূল অনুমোদিত ডিপিপি’র লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০০টি আশ্রায়ণ গ্রাম স্থাপন করে ৫০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন।
পরবর্তীতে শহর এলাকায় টিনের ঘরের পরিবর্তে বহুতল ভবন নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ ৫০ হাজার পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য ১ হাজার ৩৫ কোটি ২ লাখ টাকা বৃদ্ধি এবং মেয়াদ তিন বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে প্রথম সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) মোট ২ হাজার ২০৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
সরকার ঘোষিত সবার জন্য বাসস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মোট ২ লাখ ৫০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য প্রথম সংশোধিত ডিপিপির চেয়ে আরও ২ হাজার ৬৩৬ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি এবং মেয়াদ ২ বছর বৃদ্ধি করে মোট ৪ হাজার ৮৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে এবং ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুনে বাস্তবায়ন মেয়াদে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি ২০১৭ সালের ২ মে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
এবার মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গত বছর ১৩ মে দেশের ‘ভূমিহীন ও গৃহহীণদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা ২০২০’ অনুমোদন দেয়া হয়। এই নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভুমিহীণ ও গৃহহীন ‘ক’ শ্রেণি এবং জমি আছে কিন্তু ঘর নেই এরূপ ‘খ’ শ্রেণির ৩ লাখ ৫০ হাজার পরিবারসহ মোট ৬ লাখ পরিবার পুনর্বাসন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী একক গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সম্পাদনা : রেজা