করোনায় এবারও পর্যটনে ‘ঈদ’ যাচ্ছে ভেসে
অর্থনীতি ডেস্ক : ঈদের সময়ই খুশি নামে দেশের পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টদের মনে, কিন্তু এবারের ঈদও সেই খুশি আনতে পারেনি। কারণ করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে গত বছরের দুই ঈদের মতো এবারও বন্ধ থাকছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. রাফিউজ্জামান বলছেন, পর্যটন শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ৪০ লাখ মানুষ এখন বেকার বসে আছে। গোটা শিল্প ৫ হাজার ৭০০ কোটির টাকার ক্ষতির হিসাব গুণছে।
ঈদের পরে কখন, কবে পর্যটন শিল্প আবার খুলবে, তা এখনও অনিশ্চিত। এই অবস্থায় এই শিল্পকে সচল করতে সরকারের সহায়তা চাইছে সংশ্লিষ্টরা।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে লকডাউনের ঘোষণা করে সরকার। তখন অন্যান্য খাতের মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলোও বন্ধ হয়।
সংক্রমণ কমতে শুরু করলে সরকার বিধি-নিষেধ শিথিল করে। এরপর অগাস্টের দিকে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধি-নিষেধ দিয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড একটি ‘এসওপি’ (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) তৈরি করে সেই অনুযায়ী পর্যটন খাত চালু করে।
কিন্তু সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত এপ্রিলে ফের লকডাউন আসে, আবার বন্ধ হয়ে যায় পর্যটন কেন্দ্রগুলো। ঈদের সময় পর্যটনের রমরমা ব্যবসা হলেও এসময় তা থাকবে বন্ধ। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়শন অব বাংলাদেশের সভাপতি রাফিউজ্জামান বলেন, এই মহামারী পরিস্থিতি আবার কখন স্বাভাবিক হবে তার উপর নির্ভর করছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি চালু করতে পারব কি না। সেই অপেক্ষাতেই আমরা আছি।
কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর গত বছরের অগাস্টে চালু হলে পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টরা নানা চেষ্টায় ব্যবসা গুছিয়ে আনার চেষ্টার মধ্যেই নতুন করে বন্ধ হল।
আসন্ন ঈদের আগে যে পর্যটন খাত বন্ধ থাকছে, তা মেনে নিলেও কবে নাগাদ চালু হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় হতাশ ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি খবির উদ্দিন।
তিনি বলেন, ঈদের পর যদি খুলে না দেওয়া হয়, তাহলে আমাদেরকে এই ব্যবসা বাদ দিয়ে অন্য পেশাতে যেতে হবে।
পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ তিন থেকে পাঁচ তারকা মানের দেশের ৪৫টি হোটেল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, মহামারীর কারণে এই হোটেলগুলো গত এক বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা লোকসান গুণেছে।
মৌলভীবাজারের গ্র্যান্ড সুলতানের মতে বড় হোটেলগুলো রয়েছে অতিথিশূন্যতায়। গ্র্যান্ড সুলতানের মতে বড় হোটেলগুলো রয়েছে অতিথিশূন্যতায়।
সমিতির সচিব মোহসিন হক হিমেল বলেন, দেশের সব হোটেল শূন্য। ঘর থেকে যদি মানুষ বের হতে না পারে, তাহলে হোটেলে গিয়ে কীভাবে থাকবে।
রোজার ঈদের পরপরই যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তার কোনো ইঙ্গিতও দেখছেন না তিনি। ‘এই সেক্টর প্রায় ধসে গেছে। হোটেলের কর্মীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো হোটেল তাদের কর্মীদের সার্ভাইভ করার মতো কিছুটা সহযোগিতা করে আসছে। আবার কোনো কোনো হোটেল তাও পারছে না।’
করোনাভাইরাস সঙ্কট মোকাবেলায় সেবা খাতের জন্য সরকার যে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছিল, তা থেকে পর্যটন শিল্প কিছুই পায়নি বলে দাবি করেন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রাফিউজ্জামান।
‘আমরা সরকার থেকে কোনো ধরনের সহায়তা বলি বা প্রণোদনা বলি, কিছুই পাইনি। কম সুদে ব্যাংক ঋণের কথা বলা হয়েছিল, তাও আমরা পাইনি।’
ময়মনসিংহের ভালুকার মেঘমাটি ভিলেজের মতো রিসোর্টগুলো এখন রয়েছে সঙ্কটেময়মনসিংহের ভালুকার মেঘমাটি ভিলেজের মতো রিসোর্টগুলো এখন রয়েছে সঙ্কটে ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি খবির উদ্দিনও একই কথা বলেন। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সচিব হিমেলও বলেন, ‘এই প্যাকেজ থেকে কোনো হোটেল মালিক সুবিধা পেয়েছে বলে আমার জানা নেই।’ এই পরিস্থিতিতে সরকারি সহায়তা চেয়ে রাফিউজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হবে, তখন এখানে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন, তাদের কথা চিন্তা করে সরকার যদি এই শিল্পকে নিয়ে ভাবে, তাহলে এই শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব হয়ত হতে পারে।
খবির উদ্দিন বলেন, প্রণোদনা যদি না দেয়, সহজ শর্তে যদি ঋণ দেয় তাহলেও এই সেক্টরকে দাঁড় করানোর চেষ্টা আমরা করে যাব। আর না হয় দেশে এই সেক্টরের ব্যবসা করা কারও পক্ষেই সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সচিব হিমেল বলেন, যারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে এখাতে বিনিয়োগ করেছে, তারা বেশি বিপদে পড়েছে। ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এখন সরকার যদি কম সুদে প্যাকেজের আওতায় ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে অনেকে নতুন করে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করতে পারে।
মহামারীতে কলাতলী সৈকতের এই সৌন্দর্য উপভোগের কেউ নেই (ফাইল ছবি)মহামারীতে কলাতলী সৈকতের এই সৌন্দর্য উপভোগের কেউ নেই ।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি যখন ‘স্বাভাবিক’ হবে তখনই সরকার পর্যটন খাত খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিজম বোর্ডের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) মোহাম্মদ সাইফুল হাসান।
তিনি বলেন, মানুষের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তো কিছু করা সম্ভব না। কবে নাগাদ তা খুলতে পারে, সে বিষয়েও কোনো ধারণা দিতে পারেননি তিনি।
এখন আবার আমাদের দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টও দেখা দিয়েছে, কখন তা স্বাভাবিক হবে তার উপর নির্ভর করছে এই খাত। সূত্র : বিডিনিউজ। গ্রন্থনা : কেএম নাহিদ।