চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে ই-বর্জ্য নীতিমালা
অর্থনীতি ডেস্ক : প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার। আর ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি অব্যবহৃত বা অকেজো পণ্যের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে সমগ্র দেশ। অথচ এসব বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ বা ধ্বংসে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তা পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকির কাণ হতে পারে। তাই নীতিমালা-আইন করার মাধ্যমে এখনই ইলেকট্রনিক্স বর্জ্যরে (ই-বর্জ্য) লাগাম টানা প্রয়োজন। নয়তো অন্যান্য বর্জ্যরে তুলনায় ই-বর্জ্য দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মাইক বাজিয়ে ভ্যানগাড়িতে করে শহর কিংবা গ্রামে প্রতিনিয়ত অব্যবহৃত-অকেজো প্রযুক্তি পণ্য সংগ্রহ করেন হকাররা। এর মধ্য থেকে কিছু পণ্য মেরামত করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে বিক্রি করা হয়, আর কিছু পণ্য রিসাইক্লিং করা হয়ে থাকে। তবে এর বাইরে বড় অংশজুড়ে প্রযুক্তি পণ্য মাটির সঙ্গে মিশে উর্বরতা ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। দৈনন্দিন ব্যবহৃত পণ্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বর্জ্য তৈরি হচ্ছে- মোবাইলফোন, কম্পিউটার, প্রিন্টার, টেলিভিশন, এয়ারকন্ডিশনার, বৈদ্যুতিক বাতি এবং বিভিন্ন রকমের ইলেকট্রনিক খেলনা থেকে। এসব বর্জ্য রয়েছে সিসা, পারদ, লিড অক্সাইড, ক্যাডমিয়াম জাতীয় ধাতব ও রাসায়নিক উপাদান। যা মানুষের ত্বক, ফুসফুস, মস্তিষ্ক. স্নায়ুতন্ত্রসহ বিভিন্ন ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভয়ানক ক্ষতিকর হবে বলে মনে করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘দেশে জ্যামিতিক হারে মোবাইলফোনসহ অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। সেইসঙ্গে এসব থেকে বিপুল সংখ্যক ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। দেশে সাধারণ ও মেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু ই-বর্জ্য ধ্বংস বা সংগ্রহের জন্য কোনও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। অথচ অন্যান্য বর্জ্যরে তুলনায় ই-বর্জ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর।’ বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক মেশিনারি মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশন (বিইএমএমএ) এর গবেষণা বলছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৩.২ মিলিয়ন টন ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহ হয়, যার মধ্যে মাত্র ২০-৩০ শতাংশ পণ্য রিসাইক্লিং বা ধ্বংস হচ্ছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ বা অচল প্রযুক্তি পণ্য সংগ্রহ করে তা রিসাইক্লিংয়ের কাজ করে থাকে আজিজ রিসাইক্লিং অ্যান্ড ই-ওয়েস্ট কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতি বছর দেশে মোটা অঙ্কের মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এজন্য সরকারি সহযোগিতা ও জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর দেশে প্রায় ৪ লাখ টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে এর পরিমাণ ১২ লাখ টনে পরিণত হবে।
তাই ই-বর্জ্যরে ক্ষতির প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে খুব জরুরিভিত্তিতে একটি নীতিমালার প্রণয়ন করা দরকার বলে মনে করেন বেসরকারি মানবাধিকার ও গবেষণা সংস্থা ‘ভয়েস’ এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘দেশের বাজারে ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানিতে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। বর্তমানে এসব নীতিমালার অভাবে মার্কেটে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহ হচ্ছে। বাইরে থেকে দেশে কোন পণ্য আসবে বা আসবে না, তা নীতিমালায় পরিষ্কার করে তুলে ধরতে হবে। এজন্য সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব ই-বর্জ্যরে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। অন্যথায় দেশ এক সময় প্রযুক্তি পণ্যের ভাগাড়ে পরিণত হবে।’
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে উন্নত দেশগুলোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অস্ট্রেলিয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাদের মতো করে আমাদের দেশের মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে এবং ইনসেপ্টিভ দেওয়ার মাধ্যমে— অর্থাৎ বর্জ্য সঠিক স্থানে ফেলার বিনিময়ে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে। প্রযুক্তি ও পরিবেশের সংঙ্গে যুক্ত সরকারের সকল স্তরকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।’
ভয়াবহতা সত্ত্বেও এ বিষয়ে নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে প্রকাশ না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘বিগত ২০ বছর ধরে ই-বর্জ্যরে একটি নীতিমালা প্রণয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের একটি নীতিমালার (ডিসপোজাল ম্যানেজমেন্ট রুল) খসড়া পরিবেশ অধিদপ্তরে পড়ে আছে।’
খসড়া নীতিমালার সর্বশেষ অবস্থান জানতে কথা হয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, ভেটিংসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে নীতিমালার খসড়াটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগিরই খসড়াটি বিজি প্রেসে ছাপানোর জন্য পাঠানো হবে।’ সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন। সম্পাদনা : শোভন দত্ত