স্থানে স্থানে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া জীবিকার তাগিদে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই রাজধানীতে ফিরছেন মানুষ
অর্থনীতি ডেস্ক : গ্রামের বাড়িতে আপনজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে জীবিকার তাগিদে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। সোমবার সকালে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে ঢাকার প্রবেশমুখ গাবতলীতে মানুষজনের ফেরার এ দৃশ্য দেখা যায়।
করোনা সংক্রমণরোধে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় যাত্রীরা ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন যানবাহনে শত ভোগান্তি এবং করোনার স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করছেন।
দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরা থেকে আট মাস বয়সের ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন পারুল নামের এক নারী। সায়দাবাদে যাওয়ার জন্য আমিনবাজারে অপেক্ষারত পারুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার স্বামী সাইদাবাদে থাকেন। তিনি সন্তানকে নিয়ে একাই সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় এসেছেন। বাস সাভারের হেমায়েতপুর তাকে নামিয়ে দেয়। এরপর সেখান থেকে তিনি মালপত্র এবং সন্তানকে নিয়ে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় করে আমিনবাজার এসেছেন। তিনি বলেন, সংসারের জিনিসপত্র এবং ছোট বাচ্চা নিয়ে অনেক কষ্টে গাবতলী পর্যন্ত এসেছি।
রংপুরের তারাগঞ্জ থেকে গতকাল রাত ৮টায় বাসে করে রওয়ানা দিয়ে ঢাকায় ফিরছেন মোহামদ্দপুরের ঢাকা উদ্যানের বাসিন্দা রুস্তম আলি। রুস্তম আলি আলী ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানির গাড়িচালক তিনি। তিনি বলেন, পথে গোবিন্দগঞ্জ বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জে পুলিশ বাস আটকে দেয়। এরপর বাস বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে ভেতর দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেছে। নবীনগর পর্যন্ত এসে বাস নামিয়ে দেয়। এরপর হেঁটে এবং অটোরিকশায় এ পর্যন্ত এসেছি। এর আগের কোনো ঈদে এত কষ্ট হয়নি ঢাকা থেকে বাড়ি যেতে এবং ফেরার সময়।
আমিন বাজারে দায়িত্বরত পুলিশ সার্জেন্ট মামুনুর রশিদ বলেন, ঢাকায় বাইরে থেকে কোনো গাড়ি ঢুকছে কিনা, তা লক্ষ্য করছি। সকাল থেকে অনুমতি না থাকায় দু’টি বড় বাস ডাম্পিং দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও আমিনবাজার ব্রিজের ওপর পুলিশ সদস্যদের ঢাকায় ফেরাদের মাস্ক পড়তে উদ্বুদ্ধ করতে দেখা যায়।
সরকারের পরামর্শ ছিল এবারের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ঈদে উদযযাপন করা। কিন্তু তারপরও প্রায় কোটি মানুষ এ পরামর্শ উপেক্ষা করে নানাভাবে বাড়ি গেছেন। ঈদের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় আবার জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে ফিরছেন অধিকাংশ কর্মজীবী মানুষ।
সোমবার দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরিযোগে নদী পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আসার পর আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। গন্তব্যস্থলে যেতে হচ্ছে স্থানীয় বাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলযোগে। তবে যে সকল যাত্রী স্থানীয় বাসযোগে আসছেন তাদের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বারবাড়িয়া এলাকায় নামিয়ে দিচ্ছে বাসের চালকরা। এরপর এখান থেকে হেঁটে ব্রিজ পার হচ্ছেন যাত্রীরা। ফলে ভেঙে ভেঙে যেতে হচ্ছে তাদের। এতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলোকে পাটুরিয়ার দিকে ফেরত পাঠাচ্ছেন মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ।
শেখ শাহাবুদ্দিন আরও বলেন, সাভারের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন তিনি। ছুটি শেষ হওয়ায় স্ত্রী, সন্তান নিয়ে কর্মস্থলে ফেরার পথে অনায়াসে ফেরি পার হতে পারলেও সড়ক পথে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঘাট থেকে ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে স্থানীয় বাসযোগে বারবাড়িয়া ব্রিজ পর্যন্ত এসেছেন। এই রোদে পরিবার নিয়ে হেঁটে ব্রিজ পার হয়ে আবার অন্য বাসে উঠতে হবে। সড়ক পথে যাত্রীদের এমন ভোগান্তি দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
নাছির হোসেন নামে আরেক যাত্রী বলেন, সাতক্ষীরা থেকে সকাল ৪টার দিকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে এসে পৌঁছেছি। ঘাটে প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ফেরিতে উঠতে পেরেছি। কোনো রকম ভোগান্তি ছাড়াই ঘাট পার হতে পেরেছি। তবে পাটুরিয়া এসে বাস পাচ্ছিলাম না। বাসে উঠার পর হেলপার বলছেন ঢাকা যাবেন না। বাস যাবে বারবাড়িয়া পর্যন্ত আর ভাড়া ১০০ টাকা। সরাসরি ঢাকায় যেতে ভাড়া একটু বেশি নিলেও আমাদের মতো যাত্রীদের সমস্যা নেই। তবে সড়ক পথে একবার বাস থেকে নেমে দেড় দুই কিলোমিটার হেঁটে আবার বাসে উঠা অনেক কষ্টকর।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম মো. জিল্লুর রহমান বলেন, রোববার সকাল থেকে ঢাকামুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ থাকলেও সোমবার সকাল থেকে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কিছুটা কম। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ঈদ ফেরত যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে ১৬টি ফেরি চলাচল করছে। সূত্র : বাংলানিউজ, ঢাকা পোস্ট, জাগোনিউজ। গ্রন্থনা : শোভন দত্ত। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা