আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ২
ঝুঁকি নিয়ে জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে ফিরছেন মানুষ শিমুলিয়ায় নেই যাত্রীর চাপ বাড়তি ভাড়ায় ফিরছে মানুষ
অর্থনীতি ডেস্ক : মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী ও গাড়ির চাপ নেই। মঙ্গলবার সকাল থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে গাড়ি ও যাত্রী বোঝাই ফেরি ছেড়ে এলেও শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রীদের চাপ নেই।
তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শিমুলিয়া ঘাটে এসে যাত্রীদের ঢাকাসহ গন্তব্যে ফিরতে পোহাতে হচ্ছে বিড়ম্বনা। গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এখন অধিকাংশ যাত্রীর ভরসা সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে চালকরা ২-৩ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
শিমুলিয়ার তিনটি ফেরিঘাটের সামনে সারি সারি করে সিএনজি অটো রিক্সা রাখা হয়েছে। প্রতিটি সিএনজিতে ৫/৬ জন করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধির একবারে তোয়াক্কা করছে না এসব পরিবহন।
সিএনজিগুলো অন্য সময় শিমুলিয়া ঘাট থেকে জনপ্রতি ঢাকার পোস্তগোলা, নয়াবাজার, নারায়ণগঞ্জে ১৫০ টাকা, সায়েদাবাদে ১৫০-১৭০ টাকা, মোহাম্মদপুরে ৩০০ টাকা, মুন্সিগঞ্জ সদর, মুক্তারপুরে ১০০ টাকা ভাড়ায় নিয়মিত যাতায়াত করত। তবে বর্তমানে প্রতিটি রুটেই ২-৩ গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
বর্তমানে শিমুুলিয়া ঘাট থেকে পোস্তগোলা ও নয়াবাজারে ৩০০ টাকা, সায়েদাবাদে ৩৫০/৪০০ টাকা, মোহাম্মদপুরে ৫০০/৬০০ টাকা, মুন্সিগঞ্জ সদর, মুক্তারপুরে ২০০ টাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৩০০/৪০০ টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। আনোয়ার হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, ভাই অন্যের চাকরি করি। চাকরি বাঁচাতে হলে কর্মস্থলে ফিরতে হবে। তাই দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েই যাচ্ছি।
শিমুলিয়া ঘাট থেকে ঢাকার সায়েদাবাদ যাচ্ছেন আবিদ হোসেন। তিনি বলেন, ১৫০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা দিয়ে যাচ্ছি। তাও সবাইকে গাদাগাদি করে যেতে হচ্ছে।
ঢাকায় ফেরা অপর যাত্রী কাউসার আহমেদ বলেন, সিএনজিতে গাদাগাদি করেই ফিরতে হচ্ছে আমাদের। দিতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। সরকার গণপরিবহন খুলে দিলে এতো ভোগান্তি হতো না। ফেরিতে চাপাচাপি করে এলাম আবার সিএনজিতেও।
তবে যাত্রীদের অভিযোগ অস্বীকার করে সিএনজিচালক নাঈম হোসেন বলেন, ঢাকায় যাওয়ার সময় যাত্রী পেলেও আসতে হয় খালি। তাই ভাড়া কিছুটা বেশি না নিলে আমাদের পোষাবে না। বাধ্য হয়ে কিছুটা বেশি নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, ঘাটে এখন ১৮টি ফেরি চলছে। ওপার থেকে যাত্রীরা ফেরিতে চড়ে আসছে। শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী-গাড়ি কোনটারই চাপ নেই। তবে ওপারে কিছুটা চাপ রয়েছে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে দূরপাল্লার বাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় যাত্রীরা ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন যানবাহনে বাড়তি ভাড়া, অন্তহীন ভোগান্তি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে রাজধানীতে আসছেন।
নীলফামারী থেকে গাবতলী এসেছেন শাহরিয়ার ইসলাম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ঈদের ছুটি শেষে ফিরেছেন রাজধানীতে। যাবেন সায়েদাবাদ। তিনি বলেন, নীলফামারী থেকে ভেঙে ভেঙে গাবতলী পর্যন্ত এসেছি। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় গুণতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া। আগে ঢাকা থেকে নীলফামারী যেতে বাসে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা খরচ হতো। নীলফামারী থেকে চান্দুরা পর্যন্ত আসতেই আমার খরচ হয়েছে ১ হাজার ৭০০ টাকা। পথে ভোগান্তির অন্ত ছিল না। অনেক কষ্ট করে বাসে করে এসেছি। শুধুমাত্র চাকরি বাঁচাতে এত কষ্ট করে রাজধানীতে এসেছি।
মোহাম্মদ মুনীর পেশায় একজন কেয়ারটেকার। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জে থেকে নবীনগর আমার ফুফুর বাড়ি গিয়েছিলাম ঈদের ছুটি কাটাতে। সেখান থেকে এসেছি গাবতলী। যাব লালবাগ। সেখানে আমি একটি বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে চাকরি করি। ছুটি শেষে কাজে যোগদান করতে ফিরেছি রাজধানীতে। স
নাগরপুর তেবাড়িয়া থেকে গাবতলী এসেছেন আলী আজম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গ্রাফিক্স ডিজাইনার। ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদান করতে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলেন, ঈদের ৭ দিন ছুটি শেষে কাজে যোগদান করার জন্যই এসেছি রাজধানীতে। ভেঙে ভেঙে এসেছি গাবতলী পর্যন্ত। গুণতে হয়েছে বাড়তি ভাড়া।
দিনমজুর রডমিস্ত্রি মোখলেছুর রহমান রংপুর থেকে এসেছেন গাবতলীতে। তিনি বলেন, রংপুর থেকে রাতের বাসে উঠে সকালে আমিনবাজার এসে নেমেছি। ভাড়া গুণতে হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। ঈদের সময় বাড়ি গিয়েছিলাম ট্রাকে করে। তখন ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে রংপুর গিয়েছিলাম। আমিনবাজার থেকে গাবতলী আসতে দু’জনের ভাড়া দিতে হয়েছে ১৫০ টাকা। মঙ্গলবার কাজে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু পারলাম না। এখন যাব গুলিস্তান।
গাবতলীতে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) বিশ্বজিৎ বলেন, আমিন বাজার এলাকার কোনো বাস গাবতলীতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। গাবতলী থেকে চলছে রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটে পরিবহনগুলো। গণপরিবহনে যারাই যাতায়াত করছেন তারা মাস্ক পরিধান করছেন। সূত্র : ঢাকাপোস্ট, বাংলানিউজ, জাগোনিউজ। গ্রন্থনা : শোভন দত্ত।সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও