এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ফলে পাল্টে যাচ্ছে গ্রামের অর্থনীতি
অর্থনীতি ডেস্ক : গ্রামগঞ্জে নেই ব্যাংকের শাখা। তারপরও মিলছে ব্যাংকিং সেবা। টাকা জমা, তোলা, স্থানান্তর, পরিষেবা বিল পরিশোধ ও রেমিটেন্সের অর্থসহ সাধারণ সব সেবা পাচ্ছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। কোনো লেনদেন হলে তাৎক্ষণিক খুদে বার্তা (এসএমএস) যাচ্ছে গ্রাহকের মোবাইল ফোনে। এসব সেবা পেতে লাগছে না বাড়তি চার্জও।
সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে এসব ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ‘এজেন্ট ব্যাংকিং’। ঘরের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে আমানত ও ঋণের পরিমাণও। কার্যক্রম শুরুর মাত্র সাত বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ছাড়িয়েছে এক কোটি। এ সেবার আওতায় গ্রাহক জমা করেছেন প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার আমানত।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি পাঁচ লাখ ২৪ হাজারে। এজেন্ট ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে ১৬ হাজার ৬২৮ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ২৯১ কোটি আট লাখ টাকা জমা করেছেন গ্রামের সাধারণ জনগণ। বাকি চার হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা শহরের আমানতকারীদের জমা।
সহজে ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়ায় প্রান্তিক জনগণের কাছে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ১৪শ মতো এজেন্ট রয়েছেন। যারা কম খরচে তৃণমূলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন। এজেন্টের মাধ্যমে আমানত গ্রহণ, ঋণ প্রদান, টাকা জমা-তোলা, বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও রেমিটেন্সের অর্থ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন বলেন, সহজে ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়ায় প্রান্তিক জনগণের কাছে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ১৪শ মতো এজেন্ট রয়েছেন। যারা কম খরচে তৃণমূলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন। এজেন্টের মাধ্যমে আমানত গ্রহণ, ঋণ প্রদান, টাকা জমা-তোলা, বিভিন্ন বিল পরিশোধ ও রেমিটেন্সের অর্থ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
শুধু আর্থিক লেনদেন নয়, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন ব্যাংকিং সেবা যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। ইতিমধ্যে এজেন্টের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে এসএমই ঋণ বিতরণ হচ্ছে। আগামীতে সব ধরনের আধুনিক ব্যাংকিং সেবা এজেন্টের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হবে।
মাগুরা সদরের বেরইল পলিতা গ্রামের ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট মেসার্স আইকন এন্টারপ্রাইজের ইনচার্জ মুজাহিদুর ইসলাম বলেন, আগে ২৪ কিলোমিটার দূরে জেলা সদরে গিয়ে ব্যাংকিং সেবা নিতে হতো। এখন ঘরের পাশেই সাধারণ মানুষ ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছেন। নতুন হিসাব খোলা, আমানত গ্রহণ, রেমিট্যান্স দেওয়াসহ সাধারণ সব ব্যাংক সেবাই পাওয়া যাচ্ছে। এতে ছোট ছোট সঞ্চয়গুলো ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী কুদরত উল্লাহ বলেন, আগে ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য ২৪ কিলোমিটার দূরে যেতে হতো। এখন সহজে পাশের এজেন্টের মাধ্যমে টাকা উঠাতে ও জমা দিতে পারছি। এতে আমাদের অনেক সুবিধা হচ্ছে।
কুয়েত প্রবাসীর স্ত্রী শাপলা বেগম, বাড়ির পাশের এজেন্টের কাছ থেকে রেমিট্যান্সের টাকা উঠাতে পেরে বেশ খুশি কুয়েত প্রবাসীর স্ত্রী শাপলা বেগম। তিনি বলেন, আগে অনেক দূরে গিয়ে রেমিটেন্সের টাকা উঠাতে হতো। বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর দু-তিন দিন পর ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে টাকা তুলতে হতো। এজেন্ট ব্যাংক চালু হওয়ায় এখন আর কষ্ট করে সদরে যেতে হয় না। বাড়তি টাকাও খরচ হয় না। বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে সহজেই উঠাতে পারছি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি পাঁচ লাখ ২৪ হাজারে। এজেন্ট ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে ১৬ হাজার ৬২৮ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ২৯১ কোটি আট লাখ টাকা জমা করেছেন গ্রামের সাধারণ জনগণ। বাকি চার হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা শহরের আমানতকারীদের জমা।
এজেন্ট ব্যাংকিং এখন শুধু হিসাব খোলা ও আমানত সংগ্রহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, ঋণ বিতরণের মাধ্যমে আয় উৎসারী কর্মকা- আরও বেশি উৎসাহিত করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৯২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ৯২ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১০০ কোটি টাকা।
এজেন্ট ব্যাংকিং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বিতরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০২০ সালে ৪৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকার রেমিটেন্স বিতরণ হয়েছে এর মাধ্যমে। সূত্র : ঢাকা পোস্ট। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও