সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড নামঞ্জুর কারাগারে প্রেরণ
মামুন খান : সরকারি নথি চুরির চেষ্টার অভিযোগে অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। শুনানি শেষে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ২০ মে তার জামিন শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এদিন সকাল ৮টার দিকে শাহবাগ থানা থেকে রোজিনা ইসলামকে আদালতে হাজির করা হয়।
তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা ১১টার কিছু পরে তাকে এজলাসে তোলা হয়। মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার তার ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। দু’একজন সাংবাদিককে রিমান্ড শুনানিকালে এজলাসে প্রবেশ করতে দিলেও অধিকাংশ সাংবাদিক প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। এ নিয়ে পুলিশের সাথে সাংবাদিকদের কিছুটা বাকবিতন্ডাও হয়।
রিমান্ড শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু সাংবাদিকদের জানান, আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে রোজিনা ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আইন সবার জন্য সমান। আইনজীবী হোক, সাংবাদিক হোক বা যেই হোক না কেন। যা কিছু হোক আইন অনুযায়ী হওয়া উচিত। এসময় তাকে প্রশ্ন করা হয়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে যে ধারায় মামলা দেয়া হয়েছে এবং ৬ ঘণ্টা সচিবালয়ে আটকে রাখা হয়েছে। এটা কি হেফাজত
নিবারণ আইন ২০১৩ স্পষ্ট লঙ্ঘন কি না। প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আমি তো জানি না তাকে আটকে রাখা হয়েছি কি না। আমি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারি না। আর হেফাজত নিবারণের সাথে এ মামলার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। এটা ভিন্ন ঘটনা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে আটকে রাখতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ আবু বলেন, অনেক সময় মামলা রেডি করতে সময় লাগে। আটকে রেখে তারা পুলিশকে খবর দিছে।
পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে গেছে। তবে তাকে যদি অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয় তাহলে এর বেনিফিট আসামি পাবে।
রোজিনা ইসলামের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এহেসানুল হক সমাজী, প্রশান্ত কুমার কর্মকার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করেন। এ সময় আসক ও ব্লাস্টের আইনজীবীরাও ছিলেন।
এহেসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের জানান, মামলাটি আইনত ত্রুটিপূর্ণ মামলা। আসামিকে যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। কেননা মামলার এজাহারের মধ্যে যে ডকুমেন্টস এর কথা বলা হচ্ছে, সেই ডকুমেন্টস এর কোনো বর্ণনা এজাহারের মধ্যে নেই। যে জব্দ তালিকা আদালতে হাজির করা হয়েছে, সেই জব্দ তালিকা থেকে দেখা যায়, সেই ডকুমেন্টসগুলো কথিত মতে আসামির কাছ থেকে নয় বরং একজন সরকারি কর্মকর্তার নিজেই উপস্থাপন করেছেন। কাজেই আসামির কাছে থাকার বিষয়ে কথিত আসামি চুরি করেছে, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে সেগুলো মানহানিকর এবং আপত্তিকর।
তিনি বলেন, আদালতকে বলেছি, ৩৭৯ ধারাকে যদি বিশ্বাস করতে হয় তাহলে এর উপাদান হচ্ছে যে কোনো বিষয়বস্তু চুরি করার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত স্থানে হতে হবে। আর প্রসিকিউশনের অভিযোগ অনুযায়ী অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুযায়ী যদি বিশ্বাস করেন তাহলে কথিত মতে ঘটনাস্থল হচ্ছে সচিবালয়। সুতরাং পরস্পর বিরোধপূর্ণ দুই ধারা আদালতের কাছে সন্দেহ সৃষ্টি করে। প্রকৃত ঘটনাস্থল কোথায় এবং আদৌ ঘটনা ঘটেছিল কি না। আসামি তার মহান পেশার দায়িত্ব পালন করতে সচিবালয়ে গিয়েছিলেন। ইতিপূর্বে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় নিয়ে দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিবেদন প্রচার ও প্রকাশ করেছেন। মহান পেশার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পরিস্থিতির শিকার। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। আদালতকে বলেছি, তিনি একজন নারী। আর আনা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আসামির রিমান্ড মঞ্জুরের যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। আদালত সেটি বিবেচনায় নিয়ে রিমান্ড নামঞ্জুর করেছেন। জামিনের বিষয়ে বলেছি, ধারাগুলো জামিনযোগ্য। সুতরাং আসামির জামিন পাওয়া অধিকার। আদালত যথেষ্ট সময় নিয়ে শুনে জামিনের বিষয়টি শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার ধার্য করেছেন।
এদিকে অসুস্থ রোজিনা ইসলামের পক্ষে তার আইনজীবী উন্নত চিকিৎসার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত কারাবিধি অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষকে তাকে চিকিৎসা দেয়ার আদেশ দেন।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। স্বাস্থ্য সচিবের পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে ফাইল থেকে নথি সরানোর অভিযোগে তাকে ওই রুমে আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এক পর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তারা দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি। পরে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সাংবাদিকরা সচিবালয়ের বাইরে জড়ো হয়ে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে পুলিশ স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের রুম থেকে থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। এরপর মধ্য রাতে তার বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও