অসৎ ফল ব্যবসায়ী চক্রের কাছে জিম্মি আমরা
তারিকুল ইসলাম
ছবির আমটি আমার ছাদ বাগানের। এই প্রথম একটি আম পরিপূর্ণ হতে পেরেছে। এর আগে ঝড়ে সব আম ঝরে যেতো। ৩-৪ দিন আগে আমটি পেরে এনে ঘরে রেখেছি। ধীরে ধীরে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে আর রঙ্গিন হয়ে উঠেছে! ছবির কলাগুলো একটি পাহাড়ি পণ্যের দোকান থেকে সবুজ অবস্থায় ১ সপ্তাহ আগে কেনা। এখন পেকে সুস্বাদু ও খাবার উপযোগী হয়েছে। টমেটোগুলোর ছবি রাজশাহীর গোদাগাড়ি থেকে তোলা। সেখানকার ব্যাপরীরা অপরিপক্ক টমেটো দ্রæত পাকিয়ে রাজধানীসহ নানা এলাকায় পাঠাচ্ছে। নিউজ দেখলাম মৌয়ালরা চিনি নিয়ে সুন্দরবনে ঢোকার সময় ধরা পড়েছে, যা আগেই জানতে পেরেছি সুন্দরবন ঘুরতে গিয়ে।
আপনি যখন সময়ের আগেই পাকা টমেটো, পাকা আম, পাকা কলা, পাকা পেঁপে কিংবা যে কোন পাকা ফল খেতে চাইবেন, তখন এসব অসভ্য অসৎ ব্যাবসায়ীচক্র পাবলিক ডিমান্ড মেটাতে রাসায়নিক মেশাবেই। সারা বছর পাকা টমেটো খেতে চাইলে তো বিষই খাবেন।
এরা মানুষের মনস্তত্ত¡ বুঝে নিয়ে ব্যাবসা করছে। কেজি দরে তরমুজ, আতাফল, কমলা সবই বিক্রি করছে। আপনি যখন ২৮০ টাকা কেজি দরে আতা কিনছেন, ওজনের পর দেখছেন ১টি আতার দাম ৬০-৭০ টাকা পড়ছে। অথচ গ্রামে এই আতা ৫-১০ টাকায়ও বিকোয় না। একটি কমলার দাম ২০-২৫ টাকা পড়ছে। গত বছরও যে তরমুজটি ১০০-১৫০ টাকায় কিনেছেন, এবছর সেই সাইজের তরমুজটি দ্বিগুণ দাম! তখন তো সীমিত আয়ের মানুষ হিসেবে হাহাকার করা ছাড়া উপায় থাকে না। আপনি হয়তো একটি ছোট পরিবার মেনটেইন করেন, তাই খুব একটা গায়ে লাগেনা। কিন্তু একটি বড় বা মাঝারি বা দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এখন সুলভ দেশী ফলও খাওয়া দুরূহ।
দেশে ফল ব্যাবসায়ীদের এক ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেট তৈরী হয়েছে। এটা আমদানী থেকে খুচরা ব্যাবসা পর্যন্ত। এরা আপনাকে যেই দামে যেই কোয়ালিটির ফল খাওয়াবে, আপনি তাতেই বাধ্য। যে কোন জায়গায় ফল কিনতে যান, দেখবেন একই পরিবারেরই সবগুলো দোকান। সবাই একই দামে একই রকম ফল বিক্রি করছে আপনাকে আমাকে বোকা বানিয়ে! আমার এক বন্ধু ৩/৪ বছর আগে তার ফার্মে সাগর কলা উৎপাদন করে ঢাকায় এনে মিরপুরের ফলের আড়তে বেচতে নিয়ে গিয়েছিল। আড়তদাররা পাত্তাই দেয়নি, খুচরা দোকানিরাও না। অথচ তখন একেকটা সাগর কলা বাজার থেকে আমরা ১০ টাকায় কিনে খাচ্ছি। আরেক পরিচিতজন এক কন্টেইনার মাল্টা আমদানী করে বাবু বাজার আড়তে নিয়ে ঢোকাতেই পারেনি। বাধ্য হয়ে ২৪ লাখ টাকার ফল ৪ লাখ টাকায় বিলিয়ে এসেছে।
এসব দেখার কেউ নেই ধরে নিয়ে, অসময়ে ফলমূলসহ নানা মূখরোচক খাবার বর্জন করুন। পারলে নিজে উৎপাদনের চেষ্টা করুন। তখনই বিশাল ফাঁকিবাজিটা টের পাবেন। লেখক: থিয়েটার অ্যাক্টিভিস্ট, ফেসবুক থেকে