স্বাস্থবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা থাকছে ৪৯ দিন বন্ধ থাকার পর চলছে দূরপাল্লার বাস ট্রেন লঞ্চ
শোভন দত্ত : বিধিনিষেধ শিথিল করে গণপরিবহন চলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, দুই সিটে একজন যাত্রী নিয়ে চলছে দূরপাল্লার বাস। তবে দূরপাল্লার বাস চালুর প্রথম দিনে যাত্রীর চাপ একদমই নেই বললেই চলে। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা।
সোমবার মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে এনা পরিবহনের কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রী তেমন নেই। ময়মনসিংহগামী এনার বাসটি সকাল সাতটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে আটজন যাত্রী পেয়েছে। সাধারণ সময়ে ময়মনসিংহ ভাড়া ২২০ টাকা হলেও এখন নেওয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা। আর যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসনে বসানো হচ্ছে। এনা পরিবহনের বাস চালক বলেন, বাস চালু হওয়ায় আমরা খুশি। রুটি রুজি চালু হয়েছে। ঈদের সময় ঈদও করতে পারেনি। এখন কোনোমতে বেঁচে তো থাকতে পারবো। তবে প্রথম দিনে যাত্রী অনেক কম। এতো কম যাত্রী নিয়ে আবার বাস চালানোও কষ্ট। প্রথম দিন অনেক মানুষ জানে না। হয়তো সেজন্যই যাত্রী কম।
টাঙ্গাইলগামী উদ্দেশে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিনিময় বাস। সকাল থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত কোনো যাত্রীই পায়নি পরিবহনটি। বাসটির সুপারভাইজার জানান, সকাল থেকে বসে আছি গাড়ি নিয়ে। কোনো যাত্রী নেই। পুরো বাস ফাঁকা। আজ চালু হয়েছে। অনেকেই জানে না। আস্তে আস্তে যাত্রী হবে। এতোদিন তো বন্ধ ছিল, এখন চালু হওয়ায় আমরা খুশি। যাত্রী আজ না হয় কাল তো হবেই।
চট্টগ্রামের যাত্রী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘দূরপাল্লার বাস চালু হয়েছে শুনে সায়েদাবাদ এসেছি। এখান থেকে যেসব বাস যাবে যেকোনও একটি করে বাড়িতে যাওয়ার আশা রয়েছে।’
ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইকোনো বাস। ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুরো বাসে যাত্রী ৫ জন। কাউন্টারে গিয়ে কথা হয় মাস্টার রাশেদুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালু করেছি। সকাল থেকে আমাদের দুটি বাস ছেড়ে গেছে। যাত্রী একদম কম।
সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী কমিউটার। ট্রেনের ভেতরে যাত্রীরা পাশাপাশি আসন ফাঁকা রেখে বসেছেন। অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার পরেও অধিকাংশ আসন ফাঁকা দেখা গেছে। সকাল ৯টায় ট্রেনটি স্টেশন ছেড়ে যায়।
এর আগে ভোরে ঝারিয়া ঝাঞ্জাইলের উদ্দেশে বলাকা কমিউটার, সাড়ে ৬টায় সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস, সকাল পৌনে ৮টায় চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে রেল চলছে। ট্রেন স্যানিটাইজ করা হয়েছে। যাত্রীদের জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। সকাল থেকে ৪টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। সবগুলোতেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে।’
চলমান করোনাভাইরাসের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ৪৯ দিন বন্ধ থাকার পর দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সদরঘাট থেকে সোমবার সকালে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচল করবে। সোমবার সকালে সদরঘাট থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে গেছে। চাঁদপুরসহ এর আশেপাশের কয়েকটি জেলার মানুষের ঢাকায় যাওয়ার প্রধান বাহন হচ্ছে লঞ্চ। লঞ্চে যাতায়াত আরামদায়ক এবং সহজ হওয়ায় চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও শরীয়তপুরের কিছু এলাকার মানুষ এই রুটে যাতায়াত করেন। মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টিও যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছেড়ে গেছে।
অনেক যাত্রী বলেন, সরকার লঞ্চ-বাস চলাচল চালু করায় আমাদের ভোগান্তি অনেক কমেছে। এর আগে গত ঈদে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করার জন্য আসতে প্রচ- ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আমাদের কয়েক ধাপে ভেঙে এবং ২০০ টাকার জায়গায় প্রায় ২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এছাড়া, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আরিচা-কাজিরহাট ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। ঢাকা-বরিশালসহ ৩৪টি জেলায় লঞ্চ ও স্টিমারগুলোর দীর্ঘদিন অলস পড়ে থাকায় সেগুলো পরিষ্কার করে চলাচলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সম্পাদনা : রেজা