২০ দিনে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয়
মো. আখতারুজ্জামান : বিশ্বজুড়ে করোনার প্রভাবে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীর। চলতি মে মাসের প্রথম ২০ দিনে যে পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে এসেছে, তা গত বছরের একই সয়ময়ের পুরো মে মাসের অঙ্ককে ছাড়িয়ে গেছে। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আরও বেশি রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত করে গড়ে তুলতে আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে রেমিটেন্স প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, প্রবাসীরা চলতি মে মাসের প্রথম ২০ দিনে রেমিটেন্স পাঠিয়েছে ১৫৮ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। গতবছর মে মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। সেই হিসাবে ২০ দিনেই পুরো মাসের চেয়ে ৮ কোটি ৪২ লাখ ডলার বেশি রেমিটেন্স এসেছে। প্রবাসী আয়ের এ গতি অব্যাহত থাকলে চলতি মে মাস শেষে রেমিটেন্স আহরণ ২৪০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
গত এপ্রিলে প্রবাসীরা ২০৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন। যা দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৭ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ বেশি। গত বছর এপ্রিলে রেমিটেন্স এসেছিল ১০৯ কোটি ডলার। এর আগে, করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে গত বছরের জুলাই মাসে রেকর্ড রেমিটেন্স পায় বাংলাদেশ। ওই মাসে প্রবাসীরা প্রায় ২৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন। এর আগে, কোনও একক মাসে এতো রেমিটেন্স আসেনি।
জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন। তারা বছরে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠান। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা, এ অংক দেশের মোট রপ্তানি আয়ের অর্ধেকের বেশি। বর্তমানে ১৭৪ দেশে বাংলাদেশ শ্রমিক পাঠিয়ে আসছে, অঙ্কে যার সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখের বেশি। যাদের তিন-চতুর্থাংশ কর্মরত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।
রেমিটেন্সের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশে রেমিটেন্স এসেছে এক লাখ ৭৫ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। এর আগে, কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিটেন্স আসেনি বাংলাদেশে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিটেন্স এসেছিল এক হাজার ৪৮৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরে ১০ মাসে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলের প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসেবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আহরণ। তারও আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স আহরণের রেকর্ড হয়। ঐ সময় ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে।
অন্যদিকে, রেমিটেন্সের প্রবাহ চাঙ্গা থাকায় ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সবশেষ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৪.৮২ বিলিয়ন বা চার হাজার ৪৮২ কোটি ডলারে বেশি রয়েছে।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনও প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী। এছাড়া, ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি এক শতাংশ দেয়ার অফার দিচ্ছে। এতে করে বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।
প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আরও বেশি রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ বাড়তে পারে। একইসঙ্গে প্রবাসীদের সুবিধাও বাড়তে পারে। এই উদ্যোগ কার্যকর করতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে রেমিটেন্সে প্রণোদনা খাতে এক হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে সরকার রেমিটেন্সের ওপর দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে। এজন্য চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেটে এ খাতে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে চার হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হতে পারে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠালে বর্তমানে দুই শতাংশ হারে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এটা বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করারও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। বর্তমানে কেউ ১০০ টাকা রেমিট্যান্স পাঠালে তাকে ১০২ টাকা দেওয়া হয়। আগামীতে তা এক টাকা বাড়িয়ে ১০৩ টাকা দেওয়া হবে। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা